নিজস্ব প্রতিবেদক: হাসপাতালের আইসিউতে নিথর দেহ নিয়ে চার দিন ধরে পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। অন্যদিকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আইসিউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ইমতিয়াজের বিষয়ে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মাথায় এখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই রক্তক্ষরণ বন্ধে অপারেশনের প্রয়োজন। পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিলে আজ (বুধবার) রাতেই অপারেশন করা হতে পারে।
এর আগে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পার্কভিউ হাসপাতালে নিউরো সার্জন, নিউরো মেডিসিন ও মেডিসিনের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়। যেখানে মেডিকেল বোর্ড সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরইমধ্যে সিটি স্ক্যান করে রিপোর্ট বোর্ডের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক প্রবীর বড়ুয়া বলেন, তার কনশাস লেভেল বা চেতনার মান এখন ৮-৯ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। স্বাভাবিক মানুষের মাত্রা হয় ১৫। ১০ এর ওপরে না ওঠা পর্যন্ত তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। তার মাথায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। মঙ্গলবার রাতে একটা সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুপুরে আরেকটি সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।
ছেলের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আইসিউর সামনে বসে থাকা ইমতিয়াজের বাবা মোহাম্মদ আমির হোসেন বলেন, তাকে নিষেধ করেছিলাম মারামারিতে না যেতে। কিন্তু সে বলল, আহত বন্ধুদের হাসপাতালে নিতে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা। মানুষ কিভাবে পারে একজনকে এভাবে কোপাতে? আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অন্যদিকে ইমতিয়াজের মতো একই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া। তার মাথার খুলি ফেটে যাওয়াতে সেটির একটি অংশ অস্ত্রোপচারে খুলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তবে মামুনের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তাই আজ বুধবার বিকেলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন— আলহামদুলিল্লাহ, মামুন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। আজ তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞ হাসপাতালের ডাক্তার থেকে শুরু করে চবি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি।
পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ বলেন, ইমতিয়াজের সিটি স্ক্যানে মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেখা গেছে। এটি বন্ধে একটা অপারেশনের প্রয়োজন। আর মামুনের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তাকে আজ আমরা কেবিনে দিয়েছি। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সোয়া ১২টা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রক্টরসহ চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনার তিনদিন পর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহিম বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় আজ বুধবার আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ