চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রের মামলা ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। যে মামলায় রয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক এক মৃত কাউন্সিলর ও কয়েকজন শিল্পপতি যারা রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না বলে জানা গেছে।
এছাড়াও মামলায় নাম রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী, সেনা ও বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার। সবমিলিয়ে হত্যাচেষ্টার এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৮২ জনকে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সেস অব হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এ কে এম নুরুল্লাহ।
এদিকে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিদের তালিকায় ১৫০ নম্বরে রয়েছে একজন মৃত ব্যক্তি যিনি চার বছর আগে মারা গেছেন। একসময় চকবাজার এলাকার জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন মৃত ওই ব্যক্তি। আর তাতেই মামলাটি ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য!
এ ছাড়া মামলায় কোতোয়ালি থানায় দায়িত্বরত ওসি হিসেবে ফজলুল কাদেরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই সময় কোতোয়ালি থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল হক নামে এক পুলিশ পরিদর্শক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসনিম আক্তার নিশাত বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ একজন ছাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৮২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চট্টগ্রামে এনে ৩৬ দিনব্যাপী পুলিশ ও ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শনাক্তকরণ সহজ না করতে তারা মোবাইল সিম নিজ এলাকায় রেখে চট্টগ্রামে এসেছিল। চিকিৎসা গ্রহণ ও নিরীহ, নিরপরাধ লোক যেন অন্তর্ভুক্ত না হয় এ কারণে মামলা করতে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়েছে। প্রত্যেক আসামির নাম তিনি বিশ্বস্ত সূত্র ও নিজস্ব যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
বাদী নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা উল্লেখ করে আদালতে বলেছেন, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নিউমার্কেটে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সহযোগী সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। এতে তিনিসহ ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। বাদীকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার দুই পায়ে এখনো বুলেট বিদ্ধ রয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম, সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, রেজাউল করিম, শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক মেজর তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মুজিবুর রহমান, সাবেক সিইসি নুরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, চবকের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম প্রমুখ।
সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে— নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, মাহবুবুর রহমান রুহেল, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুর রহমান বদি, দিদারুল আলম, আশেক উল্ল্যাহ রফিক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাইমুম সরওয়ার কমল, এসএম আল মামুন, এম এ লতিফ, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, ফজলে করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে।
এর বাইরে মামলায় চসিকের সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। তিনি ২০২১ সালের ১৮ মার্চ মারা যান। মামলায় তিনি ১৫০ নম্বর আসামি। বাকিরা হলেন— পুলক খাস্তগীর, হাজি নুরুল হক, মোরশেদ আলী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জহরলাল হাজারী, আতাউল্লাহ চৌধুরী, গোলাম মো. জোবায়ের, নজরুল বাহাদুর, নাজমুল হক ডিউক, শফিউল আজিম, নুরুল আমীন মামুন, হোসেন হিরণ, আব্দুর রহমান, আবুল হাসনাত বেলাল, এম আশরাফুল আলম, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, শৈবাল দাস সুমন, হাসান মাহমুদ হাসনী, নুরুল আলম, হারুনুর রশীদ, শহীদুল আলম, গিয়াস উদ্দিন ও মোরশেদ আলম। মামলায় আরো রয়েছে ১৪ জন সাবেক নারী কাউন্সিলরের নামও।
এছাড়াও মামলায় শিল্পপতি ও কেএসআরএম গ্রুপের মালিক রাহাত এবং সাতকানিয়ার শিল্পপতি আবুল বশর আবু ও মোসলেম উদ্দিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানা গেছে।
মামলার বাদী এ কে এম নুরুল্লাহর দাবি, গত ৮ আগস্ট কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ঘটনার চার মাস পরে সুস্থ হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। মামলায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অপরাধ-প্রমাণ সম্পর্কে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেছি। ভুলে হয়ত মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ