রোয়াংছড়িতে পাঁচ বছর ধরে অকেজো সেতু, ২০ গ্রামের দুর্ভোগ

বান্দরবান প্রতিনিধি: সেতু আছে। কিন্তু সেই সেতু দিয়ে চলাচল করা যায় না। উল্টো সেতুর ওপর বানানো হয়েছে সাঁকো এবং এই সাঁকোর ওপর দিয়েই চলাচল করতে হয় উপজেলার দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের। এই সেতু পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেক। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু এবং স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সেতু-কালভার্ট ভেঙে অকেজো পড়ে থাকলেও সেখানে নতুন কোন ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন, অভিযোগ স্থানীয়দের। বলছিলাম বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ও জামছড়ি দুই ইউনিয়ন সংযোগের একমাত্র সেতু নোয়াপতং ঝিরির উপর নির্মিত সেতু-কালভার্টের কথা। এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নোয়াংপতং ও জামছড়ি দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনের জন্য নোয়াপতং ঝিরির উপর আরসিসি সেতু-কালভাট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের তিন বছরের মাথায় বর্ষার মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা প্রবল পানির স্রোতে ব্রিজটির পশ্চিম অংশ পানিতে ধসে পড়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরসিসি পাকা সেতুটির পশ্চিম অংশ পুরোটা দেবে গিয়ে ঝিরিতে তলিয়ে আছে। একপাশের সংযোগ সড়কও ভেঙ্গে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটির ওপরে এবং ভাঙা সড়কে গাছের (বল্লি) সাঁকো নির্মাণ করে গ্রামের মানুষরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। এছাড়াও সোনাইসেপ্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জামছড়ি জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সতর্কতার সাথে পারাপার হচ্ছে সাঁকো দিয়ে।

জানা গেছে, এই সেতু দিয়ে ম্রুংক্ষ্যং পাড়া, বঠান পাড়া, বুক্ষ্যং পাড়া, নাসালাং পাড়া, সোনাইসেপ্রু পাড়াসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের লোক এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে। এদিকে সেতুর উপর সাঁকো দিয়ে লোকজন চলাচল করতে পারলেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ বছর ধরে।

বিদ্যালয় পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ম্রাখ্যাইউ মার্মা ও এচিং মার্মা জানায়, বর্ষায় টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এ সাঁকোও ডুবে যায়। প্রবল পানির স্রোত থাকে ঝিরিতে। এসময় এলাকার লোকজন এপার ওপার রশি টেনে দেয় আর আমরা সে রশি ধরে ধরে অনেক ঝুঁকি নিয়ে পার হই। শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে ঝিরি পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায় অনেকেই। বই-খাতাসহ পোশাক-আশাক সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায় আমাদের।

এদিকে, অভ্যন্তরীন এলাকাগুলোতে চলাচলের পাকা সড়ক থাকলেও ভাঙ্গা সেতুর কারণে ছোট-বড় কোন যানবাহন ঢুকতে না পারায় স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফল-মূল ও শাক-সবজি মাথায় করে পরিবহণ করতে হচ্ছে। এতে যেমন সময় ব্যয় হচ্ছে, তেমনি খরচও বাড়তি যাচ্ছে কৃষকদের। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যাবসায়ীসহ বাগান মালিকরা।

বঠান পাড়ার প্রিতি বিকাশ চাকমা ও সোনাইসেপ্রু পাড়ারর বাসিন্দা মংক্যচিং মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। পাঁচ বছর ধরে সেতুটি ভেঙে অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কেউই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেতুর ওপর গাছের বল্লির দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের। জমির ফসল নিয়ে এই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় আমাদের।

নোয়াপতং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উবাপ্রু মার্মা বলেন, বছরের পর বছর এই সড়কে যানবাহন না চলায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন নানামুখী বিপাকে। হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার অন্তত ২০ গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভাঙা সেতু সরিয়ে দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা খান হীরামনি বলেন, কিছুদিনের জন্য আমাকে ওই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে শুনেছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করে ভাঙা সেতুর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবো।

চাটগাঁ নিউজ/ইলিয়াছ/এমকেএন

Scroll to Top