গাজায় অনাহারে শিশুসহ আরও ১০ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে গাজায় খাদ্য বিতরণের ফুটেজ ও ছবি প্রকাশ পাচ্ছে। কাতর নারী-শিশুরা খাবারের পাত্র বাড়িয়ে দিচ্ছেন; সেখানে রান্না করা নরম খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দেখে মনে হয়, কষ্ট করে হলেও গাজার মানুষ খাবার পাচ্ছে। এসব দৃশ্যের অন্তরালে বাস্তবায়ন হচ্ছে অনাহারে রেখে গণহত্যার নির্মম কার্যক্রম। সাংবাদিকদের লক্ষ্যে পরিণত করে হত্যা করা হচ্ছে, যাতে অভুক্ত, রুগ্নসার মানুষের হাহাকার, আর্তি গণমাধ্যমে না পৌঁছায়। কেবল কিছু গণমাধ্যমকে খাবার বিতরণের ছবি তোলার অনুমতি দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজায় গতকাল বুধবার অনাহার-অপুষ্টিতে এক দিনে আরও ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। গত ২৭ মের পর এ পর্যন্ত উপত্যকায় অনাহারে প্রাণ গেছে ৩১৩ জনের। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১১৯। পাশাপাশি বোমা ফেলে ও ত্রাণকেন্দ্রে খাবারসামগ্রী বিতরণের নামেও হত্যাকাণ্ড চলছে।

আলজাজিরা জানায়, গতকাল বুধবার এক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ১৮ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ অন্তত ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৬৮ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ৬২ হাজার ৮৯৫ জন নিহত ও ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৭ জন আহত হয়েছেন। হতাহত অধিকাংশই নারী ও শিশু।

১০ লাখ শিশু ‘ভয়াবহ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে’

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। এতে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। উপত্যকার অন্তত ১০ লাখ শিশু ভয়াবহ অপুষ্টির ঝুঁকিতে আছে। গাজা সিটির অর্ধেক সংখ্যকের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করছে। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েল কোনো নীতি-নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। কার্যত গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ধসে পড়ার মুখে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর অগ্রহণযোগ্য হামলা

গাজার আল নাসের হাসপাতালে গত সোমবার ইসারয়েলের পরপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। ওই হামলায় ৫ সাংবাদিকসহ ২১ জন নিহত হন। ইসরায়েল ওই হাসপাতালে হামলা চালালে সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করতে যান। সেই সঙ্গে উদ্ধারকর্মীরাও হাজির হন। প্রথম হামলার ১৫ মিনিট পর দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়। এতে নিহত প্রায় সবাই সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মী। এক সংবাদ সম্মেলনে মেলোনি বলেন, ‘এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর অগ্রহণযোগ্য হামলা।’ তিনি গাজায় আগ্রাসন বন্ধেরও জোর আহ্বান জানান।

এর আগে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো এ হামলার নিন্দা জানায়। এছাড়া যুক্তরাজ্য বলেছে, বেসামরিক নাগরিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দ্রুত যুদ্ধবিরতি’র দাবি জানান।

আহতদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু, বলছে এমএসএফ

গাজায় এমএসএফের অস্থায়ী চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে গত বছর যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। দ্য ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, সব মিলিয়ে ছয়টি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করেছে সংগঠনটি। তারা সব মিলিয়ে ৯০ হাজার জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। তাদের সিংহভাগই বোমা, কামানের গোলা ও গুলিতে আহত হয়েছিলেন।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top