জাতীয় মৎস্য পদক পেলেন সীতাকুণ্ডের জেলে ফকির চাঁন

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের জেলে ফকির চান দাশ (৭০) অভাব-অনটনের মধ্যেও অর্জন করেছেন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক–২০২৫।

মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। সীতাকুণ্ডের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পদক লাভ।

ফকির চাঁন তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় পদক গ্রহণ করেছি। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মত, অনেক গর্বের। জীবনভর আমার কাছে এ স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে।

ফকির চানের বাবা-দাদার পেশা ছিল সাগরে মাছ ধরা। তিনিও সেই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সন্দ্বীপ চ্যানেলে মাছ কমে যাওয়ায় তাঁর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুই শতক জমির ওপর টিনশেডের ভাঙাচোরা ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি। ঘরের চালে ফুটো, বৃষ্টির পানি ঠেকাতে প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। পাঁচ মেয়ের জনক ফকির চান তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুই মেয়ে, কণিকা দাশ স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে এবং পূজা দাশ একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। নিজে পড়াশোনা না করলেও মেয়েদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

ইলিশের মৌসুমে দাদন নিয়ে দুজন কর্মচারী রাখতে হয়, যার খরচ মাসে ৩৫ হাজার টাকা। সংসার ও ঋণের বোঝা মেটাতে মাছ ধরার মৌসুম শেষে কৃষিকাজ করেন ফকির চাঁন। বর্তমানে তাঁর প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, ফকির চাঁন কখনো নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করেন না এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেন। অভাবের মধ্যেও সন্তানদের শিক্ষিত করার প্রচেষ্টায় তিনি প্রশংসার দাবিদার।

সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, ফকির চাঁনের এ অর্জন শুধু তার নয়, পুরো সীতাকুণ্ডের গর্ব। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক সরেজমিন তদন্তের পর তাকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। এতে আমরাও গর্বিত।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top