সাঁজোয়া যানে মার্কিন পতাকা টানিয়ে ইউক্রেনে হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা টাঙানো একটি সাঁজোয়া যান দ্রুতবেগে এগিয়ে যাচ্ছে। চলন্ত অবস্থায় সেটি থেকে গোলা ছোড়ার মুহূর্তের আগুনের ফুলকিও ধরা পড়ে ক্যামেরায়। রুশ প্রচারমাধ্যম আরটি নতুন এই ভিডিওটি প্রকাশ করে দাবি করেছে, এটি একটি মার্কিন নির্মিত এম-১১৩ সাঁজোয়া যান এবং যানটি ইউক্রেনের সামরিক অবস্থানের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।

রুশ সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ভিডিওটি শনিবার (১৮ আগস্ট), ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া ওবলাস্ট এলাকা থেকে ধারণ করা হয়েছে।

আরটির দাবি, যানটি রুশ সেনাদের ৪২তম গার্ডস ডিভিশনের ৭০তম মোটরাইজড রাইফেল রেজিমেন্টের সদস্যরা ব্যবহার করেছে। পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া এ ধরনের যান ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়েছে এবং সেটিই নাকি দখল করে রাশিয়া নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে।

এই ভিডিও প্রকাশের সময়টিও লক্ষ করার মতো। মাত্র কয়েক দিন আগে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মস্কো এটিকে তাদের আন্তর্জাতিক একঘরে অবস্থার অবসান হিসেবে প্রচার করছে।

ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়েরমাক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীক ব্যবহার করছে তাদের সন্ত্রাসী, আগ্রাসী যুদ্ধে, যেখানে প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে চরম ঔদ্ধত্য।’

তবে ইউক্রেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট জানায়, ভিডিওটির সত্যতা তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

রুশ প্রচারমাধ্যমগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পকে শান্তিপ্রিয় ও বাস্তববাদী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে ইউক্রেন, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যকে ‘বাধাদানকারী শক্তি’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এমনকি তারা ট্রাম্পের পুরোনো মন্তব্যও প্রচার করছে যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিংবা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ উসকে দিয়েছিলেন, যা আসলে মস্কোর দায় এড়ানোর কৌশল।

ট্রাম্প নিজেও আলাস্কার বৈঠকের পর বলেছিলেন, পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক ছিল ‘১০-এর মধ্যে ১০।’ যদিও কোনো শান্তি চুক্তি হয়নি, তবে ট্রাম্প জানান, তারা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভূখণ্ড ভাগ-বাটোয়ারার সম্ভাবনা।

সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেছেন, জেলেনস্কি যদি ছাড় দেন তবে যুদ্ধ ‘প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে।’ তবে সেই ছাড়ের মধ্যে আছে- ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া এবং ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের দাবি না তোলা।

অভিযোগ রয়েছে, ভিডিওটি যেখানে ধারণ করা হয়েছে, সেই জাপোরিঝঝিয়া ওবলাস্টে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানান, রাশিয়া ইতোমধ্যে ফ্রন্টলাইনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে এনে এখানে মোতায়েন করছে।

বর্তমানে ওবলাস্টটির প্রায় ৭০ শতাংশ রুশ দখলে, যার মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টও রয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মস্কো ভুয়া গণভোটের মাধ্যমে এই অঞ্চলসহ আরও তিনটি এলাকাকে অবৈধভাবে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘোষণা করেছিল।

পুতিনের সাম্প্রতিক শর্ত অনুযায়ী, শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনকে ন্যূনতম দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে। যদিও এর আগে শর্তে জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top