ফের লাগামহীন সবজির দাম, স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও

নিজস্ব প্রতিবেদক : সব ধরনের সবজির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে মৌসুমের শেষ— এই দুই কারণের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবজির চাহিদা আরও বেড়ে যাওয়ায় দাম চড়ছে বলে উল্লেখ করছেন বিক্রেতারা। এতে করে সবজি কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সবজির বাজারে এমন বাড়তি দামের চিত্র দেখা গেছে।

আজকের বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫ টাকা, কাঁকরোল, ঝিঙা, পটল, ঢেঁড়শ, শসা, করলা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী, লাউ, মূলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়া প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুন্সীগঞ্জের আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আর শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম বেড়ে খুচরায় কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা, এখন বেড়ে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে লইট্যা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ফাইস্যা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলা পাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রুপচান্দা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২৪০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতিকেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০, কৈ ২০০ থেকে ২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মিলছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়।

বকশির হাটে বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদুল আলম। তিনি বলেন, আজকে বাজারে দেখছি সব ধরনের সবজির অতিরিক্ত দাম। বিগত কিছুদিন যাবত সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে, অথচ কী কারণে বাড়তি যাচ্ছে বা বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যদি সবজির এত দাম হয়, তাহলে সাধারণ ক্রেতা খাবে কী?

কাজির দেউড়ির আরেক ক্রেতা রিয়াজ মাহমুদ বলেন, বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে, কোনো সবজি নাই। কিছু কিছু সবজির এর চেয়েও বেশি দাম। এত দাম যদি সবজির হয় তাহলে আমরা কিনব কীভাবে? বিক্রেতারা কারণ হিসেবে বলছেন— থেমে থেমে বৃষ্টি আর বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ। কিন্তু আমরা ক্রেতা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি যাচ্ছে।

সবজির অতিরিক্ত দামের কারণ জানিয়ে বকশির হাটের সবজি বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে আমাদের অতিরিক্ত দামে সব সবজি কিনতে হচ্ছে। আড়তে মালের সরবরাহ খুবই কম। যে কারণে সবজিগুলো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে সেজন্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সেই সঙ্গে সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে বাজারে বর্তমানে থাকা বেশিরভাগ সবজির মৌসুম এখন শেষ হয়েছে, নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top