চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে সাত বছর আগে মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান সুমন (৩৯) নামে এক ব্যক্তি গুম হওয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরকে নির্দেশ দেন।
মামলাটি দায়ের করেন গুম হওয়া ব্যক্তির বড় ভাই ওমানপ্রবাসী মো. মাহাবুবুর রহমান (৫৫)। তিনি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী থানাধীন কাউখালী গুচ্ছগ্রাম ২ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম ওয়াহিদুর রহমানের ছেলে। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ বদরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ মামলায় তিন জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- মো. তারেকুর রহমান প্রকাশ মো. তারেক (৪২), মো. জাহাঙ্গীর মুন্সি (৩৫) ও মো. জাহাঙ্গীরসহ (৪৫) অজ্ঞাতনামা আরও ৪ থেকে ৫ জন। বাদীর অভিযোগ, আসামিরা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
বাদীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১৩ জুন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান সুমনকে চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার ডিসি রোডস্থ আব্দুল মোনাফ বিল্ডিংয়ের ষষ্ঠ তলার ব্যাচেলর কক্ষ থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ভিকটিম বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাওনা টাকা নিয়ে আসামিদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তাকে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার দুই দিন আগে ভিকটিম ও আসামিদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং সরাসরি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার দিন ভিকটিমের রুমমেট সায়েম তার বড় বোন স্কুলশিক্ষিকা ফেরদৌসি রহমানকে ফোনে জানান যে, সুমন নেই। তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি কক্ষ এলোমেলো ও মোবাইল ফোন ভাঙা অবস্থায় পান।
বাদীর অভিযোগ, থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন চকবাজার থানা পুলিশ আসামিদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পরিবর্তে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু কোনও তদন্ত না করে ভিকটিমের পরিবারকে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও মিথ্যা অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়। উল্টো তার ভাইকে জঙ্গি এবং নারীঘটিত ঘটনায় সম্পৃক্ত বলে অপবাদ দেয় এবং ভিকটিমের উক্ত বোনকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। এমনকি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সহায়তা পাওয়া যায়নি। বাদীর ভাই-বোনরা এখনও জানে না তাদের ভাই জীবিত না মৃত।
বাদী দাবি করেন, আসামিরা সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পর থেকে বাদী ও তার পরিবার প্রাণনাশের হুমকির মুখে ছিলেন, যার ফলে মামলা দায়েরে দীর্ঘ বিলম্ব ঘটে।
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাদী বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে সহায়তা চাইলে কোনও সুরাহা না পেয়ে অবশেষে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেন। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ- এর আইনি সহায়তায় বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস ছাত্তার, মানবাধিকার আইনবিদ যথাক্রমে অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহ্সান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. হারুন, অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ, অ্যাডভোকেট এএইচএম জসীম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বদরুল হাসান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন আরমান প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ