চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ বিক্রি হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এর আগে ব্রিটেনে অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করার পর যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের সম্পদের সাম্রাজ্যের বিষয়টি উন্মোচিত হয়। দেশটিতে তার তিন শতাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে যার মূল্য ১৭ কোটি পাউন্ড।
সোমবার (১১ আগস্ট) ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন ছয়টি আবাসন কোম্পানি দেশটির প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে সে দেশে সাইফুজ্জামানের বিভিন্ন সম্পদ পরিচালিত হতো।
টেলিগ্রাফ বলেছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করার পর যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের সম্পদের সাম্রাজ্যের বিষয়টি সামনে আসে। দেশটিতে তার তিন শতাধিক প্রোপার্টি (বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট) রয়েছে। এগুলোর মূল্য ১৭ কোটি পাউন্ড। অভিযোগ রয়েছে, ব্রিটেনে অর্থ পাচার করে এসব সম্পদ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) গত জুনে সাইফুজ্জামানের বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করে। তার মধ্যে নর্থ লন্ডনের সেন্ট জনস উড এলাকায় ১১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল লন্ডনের ফিটসরোভিয়া এলাকায় অনেকগুলো ফ্ল্যাট রয়েছে।
৮ আগস্ট এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এই ৩টি কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ৩শ কোটি)। গত ২৯ জুলাই এগুলোর দায়িত্ব নেয় প্রশাসনিক সংস্থা।
খবরে বলা হয়, প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া ৩টি কোম্পানি হলো- জেডটিএস প্রপার্টিজ লিমিটেড, রুখমিলা প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেড।
তবে সাবেক এই ভূমিমন্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি এবং বৈধ অর্থেই এসব সম্পদ কিনেছেন। তার বক্তব্য, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি। বর্তমানে গ্রান্ট থর্নটন প্রশাসক হিসেবে এসব সম্পদ বিক্রি করে দেনা শোধের কাজ করছে।
দেনাদারদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক, ব্রিটিশ অ্যারাব কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ফেরত চাইছে।
এখন যুক্তরাজ্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনাপ্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ট থর্নটনের প্রশাসকেরা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের একটি অংশ বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছেন। সাইফুজ্জামানের এসব সম্পদ হলো লন্ডন ও ইংল্যান্ডের দক্ষিণ–পূর্বের বিভিন্ন শহরে থাকা আবাসিক ভবন।
এসব সম্পদ বিক্রি থেকে যে অর্থ আসবে, তা ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। ঋণদাতাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ডিবিএস এবং ব্রিটিশ আরব কমার্শিয়াল ব্যাংক রয়েছে।
এদিকে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আরও একটি মামলা হয়। ৭ আগস্ট দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে এই মামলা করেন। জানা গেছে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার স্বজনকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী-বোনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ