মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে নতুন বিনোদন কেন্দ্র ‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে বাইরের রিং রোডে ‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের আদলে গড়ে তোলা এই পার্ক শহরের পরিকল্পিত নতুন বিনোদন কেন্দ্রগুলোর একটি হবে।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকবে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, বেঞ্চ ও গ্যালারি, কিড জোন এবং ফুটওভার ব্রিজসহ নানা সুবিধা। প্রায় ৬০ লাখ নগরবাসীর জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছাড়া আর কোন উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র নেই। এ বিষয়টি মাথায় রেখে চাক্তাই-কালুরঘাট অংশের প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন বিনোদন এলাকা তৈরি করা হচ্ছে।

তবে, প্রকল্পটির পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার আগেই বেড়িবাঁধ, ব্লক নির্মাণের ফলে কর্ণফুলীর অপার সৌন্দার্য এখানে দাঁড়িয়ে এবং বসে উপভোগ করা যায়। নদীর পারে নির্মিত বেড়িবাঁধ ও ব্লকগুলো এখানকার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে। দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্থানটি। বিকেল হলেই নদীর পাড়ে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনকে নিয়ে সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের একজন সিডিএ’র সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বর্তমানে আউটার রিং রোড প্রকল্পে নদীর পাড়ে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশেই রাস্তার ঢালে দ্বিতল কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ছোট আয়তনের এই স্থাপনাগুলোর নিচে থাকবে টয়লেট সুবিধা ও উপরের অংশে থাকবে ফুডজোন। যাতে উপরে বসে দর্শনার্থীরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। তবে এখানে বেশি অবকাঠামো করা হবে না।

স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান আরও বলেন, নদীর দিকের ঢালু অংশে গ্যালারির মতো করে বসার ব্যবস্থা করবো। একইসঙ্গে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন থাকবে। গ্যালারির কিছুদূর পরপর ময়লার বিন থাকবে, যাতে মানুষ ময়লা নির্ধারিত বিনে ফেলতে পারে। এছাড়া পার্কিং সুবিধাও থাকবে।

একসময় নগরীর অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকা হিসেবে পরিচিত বাকলিয়ায় সিডিএ’র এমন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরো বাকলিয়া এলাকার চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাকলিয়াসহ আশপাশের মানুষের জন্য নতুন বিনোদনের স্থান গড়ে ওঠার পাশাপাশি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় আমরা বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। যেখানে চট্টগ্রামবাসীর জন্য উন্মুক্ত একটি বিনোদনের জায়গা গড়ে তোলা হবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আদলে এটি হবে নগরীর অন্যতম পরিকল্পিত নতুন বিনোদন কেন্দ্র। এই সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষ মাসের পর মাস সময় কাটাতে পারবে। আমরা সেখানে ‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’ গড়ে তুলব। এটি একটি স্বল্প খরচের প্রকল্প, যা পরিবেশবান্ধবও হবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘কর্ণফুলী রিভারভিউ পার্ক’ হবে চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি মুক্ত আকাশের বিশ্রাম ও বিনোদনের স্থান।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেওয়া ‘কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প’ ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top