চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী খাইরুন্নেসা সুমির বঁটির কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্বামী মতিয়র রহমান। তিনি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার। শিক্ষিকা খাইরুন্নেসা সুমির এটি চতুর্থ বিয়ে।
রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের টাকাহুত গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় মতিয়র রহমানকে বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মতিয়র রহমান টাকাহুত গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকারের ছেলে এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। তার স্ত্রী খাইরুন্নেসা সুমি উপজেলার বিনইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
জানা গেছে, শিক্ষিকা খাইরুন্নেসা সুমির এটি চতুর্থ বিয়ে। তার বাবার বাড়ি একই ইউনিয়নের বিনইল গ্রামে হওয়ায় তিনি বিনইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। আগের তিনজন স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটার পর তিনি টাকাহুত গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মতিয়র রহমানকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।
প্রতিদিনের মতোই তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। এর মধ্যে মতিয়রের বাবা তার দুই মেয়ের জন্য স্থানীয় মোসলেমগঞ্জ বাজারে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেন।
এই নিয়ে স্ত্রী সুমি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং স্বামীকে বগুড়া শহরে একটি বাসা করে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি তাদের সন্তানের নামে ১০ লাখ টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট রাখারও দাবি জানান। এইসব দাবি ঘিরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়ে ওঠে।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মতিয়র রহমান কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবারও পূর্বের বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক শুরু হয়।
এক পর্যায়ে স্ত্রী খাইরুন্নেসা সুমি ঘর থেকে একটি ধারালো বঁটি নিয়ে এসে মতিয়রের মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপ দেন। এতে মতিয়র রহমান গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনার পর অভিযুক্ত স্ত্রী খাইরুন্নেসা সুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
মতিয়রের বড় বোন জান্নাতুন আরা বলেন, আমার ভাবি (ভাইয়ের স্ত্রী) একজন বেশি চাহিদার নারী। তার চরিত্রও ভালো না। আমার ভাইয়ের আগে তার আরো তিনজন স্বামী ছিল, তিনজনই ডিভোর্স করেছে। আমার ভাই তার চতুর্থ নম্বর স্বামী। তার দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। আমার ভাইয়ের আজ যে অবস্থা, তাতে বাঁচবে না মারা যাবে তা বলা যাচ্ছে না। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করব।’
মতিয়রের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। স্ত্রী হয়ে আমার নিরহ ছেলে ও তার স্বামীকে যেভাবে বঁটি দিয়ে জখম করেছে, তা ভাবাই যায় না। কিয়ামত হতে আর বেশি দিন নেই। আমি ওর বিরুদ্ধে মামলা করব।’
অন্যদিকে, মোবাইল ফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে খাইরুন্নেসা সুমি বলেন, ‘আমার স্বামী একজন নষ্ট চরিত্রের লোক। তিনি তার কর্মস্থল যমুনা ব্যাংকের এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে নষ্টামি করে আসছেন। আমি এসব বলায় তিনি নিজেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আমিও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয়ে শুনেছি, তবে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন