ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের!
দুদকের মামলা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: উনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ‘দুদক চট্টগ্রাম সমম্বিত জেলা কার্যালয়-১’ এ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শোয়াইব ইবনে আলম মামলাটি করেন।

মামলার প্রধান আসামিরা হলেন— ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল এহতেশাম আবদুল মোহাইমিন, সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, এম এ সবুর, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, শরীফ জহির ও ড. সেলিম মাহমুদ।

অন্য আসামিরা হলেন— ব্যাংকটির সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শ্রাবন্তী মজুমদার, সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার মুঝায়োনা সিদ্দিকা, সাবেক এভিপি ও ক্রেডিট অফিসার মোহাম্মদ গোলাম রাকিব, সাবেক এফএভিপি ও ম্যানেজার অপারেশন মোসাদ্দেক মো. ইউসুফ, সাবেক এফভিপি ও কারওয়ান বাজার শাখার প্রধান আলমগীর কবির।

নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকের মধ্যে রয়েছেন— প্রগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব) মোহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং আরামিট সিমেন্টের পিয়ন মো. ইয়াছিনুর রহমান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার ও কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ কামরুজ্জামান এবং নিজের ফুফাতো ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলামকে সাজান ‘ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স’ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এরপর প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে হিসাব খোলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবি)। ২৫ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করে ব্যাংকটির জুবলী রোড শাখার কর্তাদের সুপারিশে পেয়েও যান। অথচ ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানটিই ছিল ভুয়া প্রতিষ্ঠান। মূলত টাকা আত্মসাৎ করতেই ছিল এই কৌশল। যা বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে।

যদিও ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ঋণ প্রস্তাবে ১৭টি নেতিবাচক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেন। এসবের তোয়াক্কা না করে পরিচালনা পর্ষদের ৪৫৭তম সভায় ঋণটি অনুমোদন পায়। দুর্নীতিপূর্ণ কাগজপত্র ব্যবহার করে ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স নামীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২৫ কোটি টাকা ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ওই অর্থ নগদে উত্তোলন, স্থানান্তর এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর আত্মীয়কে মালিক সাজিয়ে, ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য সম্বলিত কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন করান।

পরে ওই অর্থ নগদে উত্তোলন, স্থানান্তর এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৬/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top