জীবনে হার না মানা এক অদম্য সৈনিক সন্দ্বীপের দিদারুল আলম

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি: ২০১৭ সালের এক স্বাভাবিক সকাল। চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ত সড়কে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিলেন দিদারুল আলম (৬৫)। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তার লক্ষ্য ছিল—কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানো। কিন্তু সেই দিনটি তার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা করে।

দুপুরের দিকে আগ্রাবাদ বড়পুল এলাকায় হঠাৎ একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে তার ভ্যানের সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে। দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলে চিকিৎসা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের পরামর্শে তার একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন।

চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ‘সফিক সুকানির বাড়ি’। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তার প্রিয় পরিবার—স্ত্রী, চার পুত্র এবং এক কন্যা। পঙ্গু হয়ে ফিরলেও দিদারুল আলমের মনোবল ছিল অটুট। সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি আবারও জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন।

তিনি এক পা হারিয়েও হার মানেননি। একটি অটোরিকশা চালিয়ে সন্দ্বীপের উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে ছুটে চলেন ক্র্যাচের ভরসায়। শারীরিক সীমাবদ্ধতা তার পথ আটকে রাখতে পারেনি। বরং প্রতিদিন নিজের শ্রম, সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

দিদারুল আলম বিশ্বাস করেন, যতক্ষণ শরীরে প্রাণ আছে, ততক্ষণ অন্যের ওপর ভরসা নয়—নিজের চেষ্টাই আমার পথের পাথেয়।

এই সাহসী মানুষটি আমাদের শেখান, দেহ অক্ষম হতে পারে, কিন্তু মন যদি শক্ত থাকে, তাহলে জীবন থেমে থাকে না।

চাটগাঁ নিউজ/ফয়সাল/এমকেএন

Scroll to Top