চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বেশ কিছুদিন ধরে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জাতীয় মহিলা দলের ফুটবলার পারভীন সুলতানার পায়ের রগ কেটে দেয়ার একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এমনকি ভারতীয় কিছু মিডিয়াও এটি প্রচার করতে শুরু করে উগ্রবাদীরা ‘নারীদের ফুটবল খেলা হারাম’ দাবি করে নারী ফুটবলারের উপর হামলা করে তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পায়ের রগ কাটার বিষয়টি সত্য নয়।
নারী ফুটবলারের রগ কাটার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিবৃতি দিয়েছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক দাবিতে বলা হয়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী “নারীদের ফুটবল খেলা হারাম” বলে নারী ফুটবলার পারভিন সুলতানার উপর হামলা চালিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ড. ইউনুসের শাসনামলে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটেছে। যা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
জানা যায়, মূলত রাজনৈতিক কথা কাটাকাটির জেরে প্রতিপক্ষদের হামলায় গত ১৪ এপ্রিল খুন হয় উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামের বাসিন্দা মৃত লাল মিয়ার পুত্র বিএনপির কর্মী রশিদ আহমেদ (৫৫)। হত্যার শিকার রশিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় কালারমারছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক অমিত হাসানের ভাই কামরুল হাসান ওরফে রোমা ও আরেক ভাই হেলাল উদ্দিনসহ তিনজন মিলে রশিদ আহমদকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় ও ছুরিকাঘাত করে। এ তিনজনই ফুটবলার পারভিন সুলতানার আপন ভাই।
এদিকে, রশিদ আহমেদ হত্যার ঘটনায় পরদিন (১৫ এপ্রিল) নিহতের স্ত্রী খুরশিদা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসানকে প্রধান আসামি করে মহেশখালী থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে নারী পুরুষসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখনোও তদন্তধীন। রশিদের পরিবারের দাবি তারা পারভিনের রগ কাটার জন্য ওখানে যায় নি। রশিদের হত্যাকারী কামরুল হাসানকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে তারা সেখানে গিয়েছিলেন।
মামলার তথ্য এবং পুলিশের ভাষ্যমতে, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসানের সাথে নিহত বিএনপি কর্মী রশিদ আহমদের রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তা ঝগড়ায় রূপ নেয় এবং তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। রশিদকে হত্যার পর অভিযুক্ত অমিত হাসান অর্থাৎ ফুটবলার পারভিনদের বাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি কর্মী রশিদের লোকজন। এ নিয়ে গত ২ জুন সংবাদ সম্মেলন করে পারভিনের পরিবার। সেদিন তারা পারভিনের পায়ে কোপ দিয়ে রগ কেটে দেয় বলে অভিযোগ করেন।
ফুটবলার পারভিন ও তার বোনদের দাবি তাদের বাড়ি থেকে লুট করে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকারসহ অনেক কিছুই নিয়ে যায় বিএনপিকর্মী রশিদের লোকজন। এমনকি এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও পারভিনসহ পরিবারের নারীদেরও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর ২৮ মে লিখিত অভিযোগ করেছেন পারভিনের আরেক ভাই হেলাল উদ্দিন। সেখানে তিনি দাবি করেন, বাদীর পক্ষের লোকজন মৃত রশিদ আহমেদের ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে হত্যা মামলায় আমাকে ৩ নং আসামি এবং অপরাপর নিরহ বোনদেরও আসামি করা হয়েছে। এমনকি এই মামলায় রেহায় পায়নি শ্বশুর বাড়িতে থাকা দুই বোনও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রশিদ হত্যার জেরে পারভিনের এক ভাই কামরুল হাসান ওরফে রোমাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে অন্যদিকে আরেক ভাই হেলাল উদ্দিন জামিন নিতে গেলে তাকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠিয়েছে আদালত। আর অপর ভাই মামলার মূল আসামি ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান এই ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পারভিনের বাড়িতে হামলার প্রেক্ষিতে পারভিনের পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে, সেখানে ভাঙচুরের কথা উল্লেখ করা হয়। রগ কাটার তথ্য সেখানে নেই।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ