রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা— কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ছে ৮১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই বর্ধিত চার্জ ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে, যা বাংলাদেশি রপ্তানির উপর ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এতে করে রপ্তানিকারকরা মনে করছেন এটি দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান শুল্ক বিতর্কের মধ্যে একটি নতুন ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে— এই চার্জ বৃদ্ধির ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে।

তবে বিকডা জানিয়েছে— ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোর (আইসিডি) বিনিয়োগ ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাটা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন আইসিডিগুলোও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে এবং পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। শ্রমিক মজুরি, যন্ত্রপাতির খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, টাকার অবমূল্যায়ন ও ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে পরিচালন ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে কার্যক্রম সচল রাখতে এবং নতুন আইসিডিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হ্যান্ডলিং চার্জ সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়েছে।

বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন— চলমান উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, টাকার মান হ্রাস, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি, শ্রম ও যন্ত্রপাতির ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা খরচ বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ পুনর্বিবেচনা করে বাড়ানো হয়েছে।

বিকডার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে একটি ২০ ফুট পণ্যবাহী রপ্তানি কন্টেইনারের হ্যান্ডলিং চার্জ বিদ্যমান ৬,১৮৭ টাকা থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে ৯,৯০০ টাকা হবে। একটি ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য চার্জ ৮,২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩,২০০ টাকা হবে। ৪০ ফুট হাই-কিউব কন্টেইনার এবং ৪৫ ফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৮,২৫০ টাকা থেকে চার্জ ৮১ শতাংশ বেড়ে ১৪,৯০০ টাকা হবে।

বাদ যাচ্ছেনা খালি কন্টেইনারের চার্জ। একটি ২০ ফুট খালি কন্টেইনারের গ্রাউন্ড রেট ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হবে, এবং ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হবে। তাদের লিফট-অন/লিফট-অফ চার্জ বিদ্যমান ৫১২ টাকা থেকে ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য ৭৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট কন্টেইনারের জন্য ৭০০ টাকা হবে।

এছাড়া ডকুমেন্টেশন চার্জ ২০ ফুট এবং ৪০ ফুট উভয় কন্টেইনারের জন্য বিদ্যমান ২৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হবে। এসবের পাশাপাশি বিকডা সিএফএস স্টোরেজ চার্জ, লেবার চার্জ, সর্টিং চার্জ এবং রিফার প্লাগ-ইন চার্জ সহ অন্যান্য চার্জ বাড়ানোর বিষয়েও চিন্তা ভাবনা করছে।

বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, ডিপো মালিকরা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা অন্তত জানতে পারত, আমরা এই বাড়তি চার্জ বহন করতে পারব কি না। একতরফা চার্জ বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত রপ্তানি খাতের জন্য অশনি সংকেত। এমনিতেই পোশাক শিল্প বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের সিদ্ধান্ত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকে থাকাটাই রপ্তানিকারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ। একদিকে বাড়তি শুল্কের চাপ, অন্যদিকে স্থানীয় চার্জ বৃদ্ধি— এটা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আগে যেখানে ৩৮ ধরনের পণ্য কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করা হতো, এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫-তে। এর ফলে ডিপোগুলোর ব্যবসা ভালোই চলছে। যখন ব্যবসা বাড়ছে, তখন চার্জ বাড়ানো একেবারেই অনুচিত। তারা এখনই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন— ‘চার্জ বৃদ্ধির চূড়ান্ত বোঝা রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের ওপর পড়বে, যার ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যদি একসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা চার্জ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে করে সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাবে পণ্যের দাম’।

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি অফডক রয়েছে, যাদের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৮ হাজার একক কনটেইনার। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের মোট রপ্তানির ৯৩ শতাংশ এবং আমদানির ২০ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডল করে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top