চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে প্রতিরোধের শহর, লড়াইয়ের শহর। আমাদের রাজনীতির সূচনা করেছি এই শহর থেকে। আমরা চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় গিয়েছি। আমরা সবাই মিলে সফলভাবে স্বৈরাচারকে হটাতে পেরেছি কিন্তু সফলভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। আমাদের রাষ্ট্র গঠনে মনোযোগ দিতে হবে।
আজ রোববার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ২নং গেট এলাকার বিপ্লব উদ্যানে এনসিপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন— আমাদের অতীতে যারা শাসন করেছে, তারা জানতো দিনশেষে তারা দেশে থাকতে পারবে না। তারা হয়ত ভারতে পালাবে, হয়ত আমেরিকায় পালাবে, হয়ত লন্ডনে পালিয়ে যাবে। সেজন্য তারা আগে থেকেই তারা তাদের ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। তারা তাদের সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। থার্ড হোম বানিয়েছে। আমরা যারা বাংলাদেশে থাকবো তাদের বাংলাদেশকে নিয়েই থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অতীত প্রজন্ম আমাদের জন্য কিছু রেখে যায় নাই। তারা আমাদের জন্য ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে গেছে। তারা আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে গেছে। আমাদের মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ দিয়ে গেছে। আমরা যারা এ প্রজন্মের আছি, আমাদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। এই সব সমস্যার সমাধান আমাদের করতে হবে। এই তরুণ প্রজন্মকে অর্থ দিয়ে কেনা যায় না, লোভ দিয়ে কেনা যায় না। হাসিনা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারে নাই। এই তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে ইতিহাস রচনা করা হবে।
হাসনাত আরও বলেন, আমরা বর্তমানে যে কার্যক্রম করব, সেগুলোর ফল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভোগ করবে। বর্তমানের কাঠগড়ায় যেভাবে অতীতকে দায়বদ্ধ করি, বর্তমানে আমরা দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় আমরা দায়বদ্ধ হবো। সে জন্য আমাদের একটা ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র লাগবে। নীতিনির্ভর রাষ্ট্র লাগবে। আমাদের তরণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যে ফাটল তৈরি করতে চাইবে, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের লড়াই দ্বিতীয় বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। সেই নতুন বাংলাদেশ হবে ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ ও জবাবদিহিতার। নতুন বাংলাদেশে আমরা লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষকে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বিল্ডিং দেখিয়ে এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দশ হাজার টাকার প্রজেক্ট কোন ফাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকার হয়ে যায়, বাংলাদেশের মানুষ তার জবাব চায়। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ চাই, সেখানে যে কোন প্রজেক্টের হিসাব জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘসময় ধরে নাগরিক অধিকার, সেবা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির শিকার হয়, শিক্ষাবোর্ডে গেলে, আইডি কার্ড পরিবর্তন করতে গেলে থানায় গেলে, সচিবালয়ে গেলে হয়রানির শিকার হয়। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জায়গা। এখানে কোন বিভেদ থাকবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিন্তু বিগত সময়ে ধর্ম পালন করতে দেয় নাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বাংলাদেশের সকল জায়গায় আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। নীতির জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন।
এই বাংলাদেশে যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, এজন্য বিচার আর সংস্কার প্রয়োজন। আমরা এই চট্টগ্রাম থেকে স্লোগানের মাধ্যমে জানান দিতে চাই, এই মুহূর্তে দরকার বিচার আর সংস্কার।
এর আগে সমাবেশে শুরুর আগে দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল ও স্লোগানে যোগ দিতে দিতে সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এদিকে এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সমাবেশ ঘিরে পুলিশের স্পেশাল ইউনিট সোয়াট সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারের কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর ঘটনায় চট্টগ্রামে দলটির সমাবেশকে সামনে রেখে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ