আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজাজুড়ে শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৪ জন রাফাহতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে খাদ্য সহায়তা নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
কাতারে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনেকটাই ভেস্তে গেছে এবং গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যখন আন্তর্জাতিক নিন্দা বাড়ছে, তখন এই হত্যার ঘটনা ঘটল। খবর বিবিসির।
রাফাহ শহরের আল-শাকুশ এলাকায় হামলার শিকার একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের একটি স্থাপনের সামনে ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব স্থাপনাকে ইতিমধ্যে মানুষ হত্যার কারখানা ও মৃত্যুকূপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফিরে আসা সামির শা’ত বলেন, সেখানে চারপাশে ছিল রক্তের ছোট ছোট পুকুর। যারা খাবারের ব্যাগ আনতে এসেছিল, সেই ব্যাগই তাদের কাফনের কাপড় হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম, এটা ছিল একটা মৃত্যু-কূপ।
তিনি আরও বলেন, তারা হঠাৎ পাগলের মতো গুলি চালাতে শুরু করে। আমি যখন আমার বন্ধুর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটছিলাম, তখন আমার চারপাশে ছিল লাশ।
আরেক ফিলিস্তিনি বাবা মোহাম্মদ বারবাখ বলেন, ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলিতেই নিহত হয়েছেন ত্রাণপ্রত্যাশীরা। তারা আমাদের ধোঁকা দেয়, সাহায্য নিতে আসতে বলে। তারপর ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালায়, যেন আমরা হাঁস-মুরগি, যেন আমাদের শিকার করা হচ্ছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম বলেন, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র রাফাহতে একটি ত্রাণ সহায়তাকেন্দ্র চালু রেখেছে। এতে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে খাদ্য সহায়তা নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়া ইসরায়েলি সেনারা ক্ষুধার্ত জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং গোলযোগের সৃষ্টি হয়।
গাজার চিকিৎসকদের তথ্যমতে, মে মাসের শেষদিকে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত এসব কেন্দ্রেই ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, আহতদের বেশিরভাগের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। বিপুল সংখ্যক হতাহত সামলাতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন