আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১২ দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এটিকে টেকসই হিসেবে নয়; বরং কৌশলগত বিরতি হিসেবেই দেখছে তেহরান।
দীর্ঘদিনের ‘স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স’ বা কৌশলগত ধৈর্যের নীতির অংশ হিসেবে ইরান এখন নিজেদের নতুন করে সাজাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ যুদ্ধে ইসরায়েল ‘জয়’ দাবি করলেও, ইরানও নিজেদের বিজয়ী বলেই মনে করছে। ইরান এ সংঘাতকে ‘ইমপোজড ওয়ার’ বা চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ হিসেবে দেখছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রিন সিগন্যাল’-এ সংঘটিত হয়েছে। অতীতের ইরান-ইরাক যুদ্ধের মতোই ইরান বিশ্বাস করছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজয় আসবে, আর সেই সময়কে কাজে লাগাতেই তারা কৌশলগত বিরতির পথে।
অস্ত্র মজুত ও পুনর্গঠন
যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের বহু সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলে।
এখন ইরান নিজের সামরিক শক্তি নতুন করে গড়ে তোলায় মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে, স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুত বৃদ্ধি, ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
ইরান উপলব্ধি করেছে, আধুনিক যুদ্ধে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোনের ওপর নির্ভর করে জয় সম্ভব নয়। তাই রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সু-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে তেহরান আগ্রহী। পাশাপাশি চীনের জে-১০ ও পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ যুদ্ধবিমানও বিবেচনায় রয়েছে।
এ ছাড়া, আকাশভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা না থাকায় ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। তাই চীন বা রাশিয়া থেকে এ ধরনের প্রযুক্তি সংগ্রহ এখন তাদের অগ্রাধিকার।
কূটনৈতিক ও আইনি লড়াই
সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ইরান এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ও কূটনৈতিক লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা করছে।
তেহরান জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা পারমাণবিক আলোচনায় ফিরবে না। এরই মধ্যে ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে। যুদ্ধের আগে গোপনে বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে, যা এখনো অক্ষত রয়েছে। এই মজুত ভবিষ্যতে তাদের কৌশলগত চাপের অস্ত্র হতে পারে।
সময়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
ইরান এখন যুদ্ধের ক্ষত সারানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে সামরিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের ভেতরের ও বাইরের চাপ বাড়বে। আর এ সময়কে কাজে লাগিয়েই তারা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করবে। ফলে এই যুদ্ধবিরতি আসলে বড় কোনো শান্তি নয়—এটা কেবলমাত্র আরও বড় সংঘাতের আগাম প্রস্তুতি।
তেহরানের কাছে ‘কৌশলগত ধৈর্য’ মানে শুধু ধৈর্য নয়; বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধেরই অংশ। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কারা সময়ের এ খেলায় জয়ী হয়—তেহরান না তেলআবিব।
তথ্যসূত্র : মিডলইস্ট আই
চাটগাঁ নিউজ/জেএই্চ