নিজস্ব প্রতিবেদক: রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার সমন্বয়হীনতা আর গেল না। একই ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে দুই সংস্থার মধ্যে এ সমন্বয়হীনতা চলছে। চসিক বলছে, নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলো সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেবে-এটাই শর্ত। আর ওয়াসা বলছে, প্রকল্প কাজের জন্য কর্তন করা রাস্তা মেরামতের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে টাকা দেয়া হয়। এমনকি কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রাস্তাগুলো কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
তবে রাস্তা কর্তন সংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতায় দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটির কাজ চলছে।
প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৭২ হাজার বাসাবাড়ি থেকে পয়োনিষ্কাশন করার কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ এবং ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন বসানো হচ্ছে। দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার একটি পয়োশোধনাগারও নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
চট্টগ্রামে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। নগরের ২১টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে পয়োনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। তবে কয়টি রাস্তা কাটা হবে- প্রকল্পে সে সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হবে এবং একটি আধুনিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে পাইপলাইন বসানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে পয়োবর্জ্য শোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।
তবে ওয়াসার অভিযোগ, ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এলাকার যে কয়টি রাস্তা কর্তন করে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলো সিটি কর্পোরেশনকে কয়েক বছর আগেই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন সেসব রাস্তার মেরামত কাজই শুরু করেনি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সাথে আমাদের রাস্তা কর্তন সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তিতে এ বছরের জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোন কোন সড়ক কাটা হবে সেটিও উল্লেখ আছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপের আওতায় প্রায় ১১টি ওয়ার্ডের পয়োবর্জ্য হালিশহর প্ল্যান্টে শোধন করা হবে। সে লক্ষ্যে হালিশহর এলাকার যে সড়কগুলো কাটা হয়েছে চাহিদা অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাজ শেষের এত বছর কেটে গেলেও সড়কগুলো সংস্কার করা হয়নি। সড়কগুলো সংস্কার না হওয়ায় মানুষের দু্র্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওয়াসা যেসব সড়ক কর্তন করেছে সবগুলো সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করেনি।
তবে যে সড়কগুলো হস্তান্তর করেছে সেগুলোর সংস্কার কখন শুরু হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে বৃষ্টির মৌসুম। আমাদের সব পরিকল্পনা করা আছে। বর্ষার সংস্কার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে বর্ষা শেষ হলেই দ্রুত সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, হালিশহর এলাকায় ওয়াসার প্রকল্প কাজ করার জন্য রাস্তা খোঁড়া হলে স্বয়ং সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সেখানে পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে মেয়র নিজেও অননুমোদিত ভাবে ওয়াসার রাস্তা কাটার বিষয়টি দেখতে পান। এ নিয়ে গত ২৭ জুন মেয়রের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, মেয়র ডা. শাহাদাত নিজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বলছেন, বর্ষাকালে আমরা রাস্তা কাটার কাজ বন্ধ রেখেছি। তাছাড়া এই রাস্তা কাটার ক্ষেত্রে তো অনুমোদনও নেয়া হয়নি। এর মধ্যেও কেন রাস্তা কাটা হচ্ছে। তিনি তৎক্ষণাৎ রাস্তা কাটার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এসময় মেয়রের পাশে থাকা চসিকের এক কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাস্তা কাটার অনুমতি নেই। আর যদি কাজের জন্য রাস্তা কাটতেই হয় সেক্ষেত্রে দ্বিগুণ চার্জ পরিশোধ করে রাস্তা কাটতে হবে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ
সাম্প্রতিক সব খবর পেতে ভিজিট করুন…
লাইভ আপডেটেড ভিডিও নিউজ দেখতে চোখ রাখুন সিপ্লাস টিভির ইউটিউব চ্যানেলে