ডিআইজির সাক্ষাৎ না পেয়ে সড়ক অবরোধ এনসিপি-বৈষম্যবিরোধীদের

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কাছে গিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতাকর্মী। তারা ডিআইজিকে কার্যালয়ের বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু এতে ডিআইজির সম্মতি না পেয়ে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

নগরীর খুলশী থানার সামনে জাকির হোসেন সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বুধবার (২ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এতে সড়কের উভয়পাশে যানবাহন আটকে গেছে এবং আশপাশের সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশ ডিআইজি কার্যালয় ও খুলশী থানার আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

মঙ্গলবার রাতে পটিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের পর আজ (বুধবার) সকাল থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা প্রথমে থানা অবরুদ্ধ করে এব পরবর্তীতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

এর ধারাবাহিকতায় বিকেল তিনটার দিকে আরেকদল নেতাকর্মী নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকায় থানার পাশে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা প্রথমে ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চান। তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি গিয়ে তাদের ভেতরে কার্যালয়ে যাবার জন্য বলেন।

কিন্তু তারা কার্যালয়ের ভেতরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বারবার ডিআইজিকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানাতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পরও ডিআইজির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তারা সেখান থেকে সরতে থাকেন। পরে মিছিল নিয়ে খুলশী থানা ও ডিআইজি কার্যালয়ের প্রবেশপথ আটকে জাকির হোসেন সড়কের উভয়পাশে অবস্থান নেন।

সড়কে অবস্থানকারীরা অধিকাংশই নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়েছেন। কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং কেউ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে জানান। তারা পটিয়া থানার ওসি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে পটিয়া থানার ওসি আমাদের একদল সহযোদ্ধাকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন। তাদের অনেকে এখন হাসপাতালে আছে। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছি, কিন্তু পুলিশের ভেতরে যে ফ্যাসিবাদি কাঠামো সেটা বিলুপ্ত করতে পারিনি। সেই ফ্যাসিবাদি কাঠামো ভাঙার জন্যই আমরা ডিআইজি অফিসের সামনে এসেছিলাম। কিন্তু ডিআইজি আমাদের দেখা দেননি। এজন্য আমরা সড়কে অবস্থান নিয়েছি। এতে মানুষের কোনো ভোগান্তি হলে সেটার দায় ডিআইজিকে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

খুলশী থানার ওসি আফতাব আহমেদ বলেন, ’৩০ জনের মতো ডিআইজি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। স্যার সবাইকে ভেতরে ওয়েলকাম জানিয়েছেন। তিনজন অ্যাডিশনাল ডিআইজি স্যার গেইটে এসে তাদের ভেতরে যাবার কথা বলেন। কিন্তু তারা কিছুক্ষণ নানা কথাবার্তা বলে এক পর্যায়ে দাবি করেন ডিআইজি স্যারকে অফিসের বাইরে রাস্তায় এসে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। তখন মনে হল, তাদের উদ্দেশ্য তো ভালো না। ডিআইজি স্যার সরকারি অফিস ফেলে রাস্তায় কেন আসবেন! এখন তারা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে।’

এদিকে ডিআইজি কার্যালয়, খুলশী থানা ও খুলশী আবাসিক এলাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সড়কে যেখানে বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন, এর আশপাশে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আছেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ উল্লেখ করে এক যুবককে মারধর করতে করতে থানায় ঢোকার সময় পুলিশ বাধা দেয়, এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দাবি, রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদারকে আটক করে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অতর্কিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করে। এতে তাদের কয়েকজন আহত নেতাকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

পুলিশের ‘হামলার’ প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এক যুবককে ছাত্রলীগের নেতা উল্লেখ করে মারধর করতে করতে থানা চত্বরে নিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য, ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।

এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা আটক যুবককে নিয়ে থানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের ধ্বস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের থানা থেকে বের করে দেয়।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top