রাউজান প্রতিনিধি : হালদা আল্লাহর দান, হালদার ওপর দূষণ, নিপীড়ন আর সহ্য করা হবে না। এই নদী রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘হালদা ঘুরে যেটা দেখলাম, তা হাজার বই পড়েও জানা যেত না। এটি দেশের বড় ঐতিহ্য। এ নদীতে যে প্রাকৃতিক প্রজনন হয়, তা এক বিশাল বিস্ময়। মা মাছের ডিম দেওয়াটা অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখে।’
আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা মোবারকখীল এলাকায় হালদা নদী পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নদীসংলগ্ন এলাকাবাসী, ডিম সংগ্রহকারী, স্বেচ্ছাসেবক, পাহারাদার ও স্থানীয় সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘এ নদীর পোনাগুলো মুক্তার মতো। এখান থেকে বছরে শত শত কোটি টাকার মাছ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু দূষণের কারণে হালদার মা মাছ এখন একবারই ডিম দেয়, আগে দিত তিনবার। এটা বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘হালদার পাড়ে তামাক চাষ করতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। তামাক চাষ বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা করা হবে। হালদার ক্ষতি হয় এমন কিছু আমি সহ্য করবো না।’
রাবার ড্যাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, হালদার রাবার ড্যাম হালদার ক্ষতি করছে, এটা চা বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছে। কিন্তু হালদার ক্ষতি হলে এটা রাখা যাবে না। এই নদীর দূষণের ব্যাপারে আমাদের কঠোর হতে হবে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার হালদা নদী এবং হ্যাচারির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে হ্যাচারিতে নিজস্ব উৎপাদিত রুইজাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। এ সময় হালদার প্রাক-প্রজননকালীন পরিবেশ এবং ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথিরা বলেন, হালদা থেকে এবার ১৪ কেজি ডিম পাওয়া গেছে এটা কারো একার সাফল্য নয়, বরং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। ডিম সংগ্রহকারী, পাড়বাসীদের সচেতনতা, প্রশাসনের তৎপরতা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আন্তরিকতায় এমন সাফল্য এসেছে। তারা জানান, বাংলাদেশে ৪টি নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হয়, কিন্তু হালদার পোনাই সবচেয়ে ‘পিউর’।
এ সময় হ্যাচারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে হালদাকে রক্ষা করা সম্ভব। স্টেকহোল্ডাররা সভায় মানিকছড়িতে তামাক চাষ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গেজেট প্রকাশের দাবি জানান। একইসঙ্গে ফটিকছড়িতে রাবার ড্যাম সরিয়ে নেওয়ারও জোর দাবি তোলেন তারা।
মৎস্য অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
অতিথি ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুস সবুর, যুগ্ম সচিব মো. হেমায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. নিজাম উদ্দিন, রাঙামাটি কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাসিম হায়দার, হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া ও হালদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চন্দনাইশের সাবেক মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান আহসানুল কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মোবারকখীল হ্যাচারির পরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
আরও উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ, রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অং ছিং মারমা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর আজাদী প্রমুখ।
স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নদী পরিব্রাজক দলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি এস. এম খোরশেদুল ইসলাম, কেশব বড়ুয়া, তামাক চাষী কামাল হোসেন, ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম, নেজাম উদ্দিন রানা, কামাল হোসেন, কামাল উদ্দিন সওদাগর, মোহাম্মদ ইলিয়াস, শফিউল আলম প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এসএ