চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: আজ ১ জুলাই। ঠিক এক বছর আগে, এই দিনে শুরু হয়েছিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন।
‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’—এই স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের সব ক্যাম্পাস। তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে শুরু হওয়া এ আন্দোলন রূপ নেয় ৩৬ দিনের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে।
আন্দোলনের সূচনা হয় ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে। ওই রায়ে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হল ঘুরে গিয়ে রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সেখান থেকেই ঘোষিত হয় চার দফা দাবি। সেগুলো হলো— ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বহাল রাখা, কমিশন গঠন করে দ্রুত বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবস্থা এবং কোটাব্যবস্থা সংস্কারে চূড়ান্ত আইনগত সুরাহা।
দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সমাধান না হলে ‘গণপদযাত্রা’ ও লাগাতার আন্দোলন চলবে।
একই সময়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন, ‘চাকরি কোটায় নয়, মেধায় হোক’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করা হয়। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দেন, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবি না মানলে মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল কর্মসূচিময়।
আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজন করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত দিয়ে এর সূচনা হবে।
বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবার এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ‘জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালা’। এটি চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
আজ ১ জুলাই সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা, জুলাই ক্যালেন্ডার প্রকাশ এবং গণ-স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। ১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই স্বাক্ষর সংগ্রহ।
আজ থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’-এর উদ্বোধন করবেন।
মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন, ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) ৩৬ জেলার কেন্দ্রে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রধান উপদেষ্টার শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিজয় মিছিল, ড্রোন শো, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান এবং ‘৩৬ ডেইস অব জুলাই’ সহ জুলাইয়ের অন্যান্য ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ড্রোন শোর আয়োজন করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এর আগে জুলাই মাসজুড়ে ছিল লাগাতার আন্দোলন। ইতিহাসে এই ঘটনাকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বা ‘জুলাই বিপ্লব’ বলা হয়।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ