গ্যাস সংকটে নাকাল চাটগাঁবাসী, ঘরে বাইরে দুর্ভোগ!

জাহিদ সবুজ:  দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে জাতীয় গ্রিডে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে।

গতকাল বুধবার (১৮ জুন) বিকেল থেকে এই গ্যাস সংকট স্বল্প মাত্রায় দেখা দেয়। তবে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার কিছু পরে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় গ্যাস সরবরাহ। ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু অফিস গমনকারী সকলে পড়েছেন বিপাকে। নগরীতে সংকট দেখা দিয়েছে গ্যাসচালিত গণপরিবহনের।

আর সংকট উত্তরণের সহসা কোনো সমাধান নেই কেজিডিসিএল কর্মকর্তাদের কাছে। তারা আবহাওয়ার ওপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন।

আগ্রাবাদের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা মাস্তুরা মুহী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, রোজ সকাল ৮টায় আমি বের হয়ে যায়। তার আগে বাসার সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে একসাথে টেবিলে খেতে বসি। আজ কি হলো জানিনা হঠাৎ চুলা জ্বালিয়ে দেখি গ্যাসের চাপ নেই। অল্প গ্যাসে চা বানাতে পারলেও নাস্তা-ভাত তরকারি কিছুই রান্না করতে পারিনি।

অফিসগামী বেসরকারী কর্মকর্তা আব্দুস সবুর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় অপেক্ষায় ছিলেন গণপরিবহনে ওঠার। কিন্তু গাড়ির কোনো হদিস না পেয়ে চড়া মূল্যে ভাড়া করলেন বাইক। জানতে চাইলে তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আজ সকালে নাস্তা করে বের হতে পারিনি। তার মধ্যে ৩০ মিনিট মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো গাড়ি পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যে বাইক ভাড়া করে অফিসে যেতে হলো। আজ পদে পদে এত ভোগান্তির শিকার হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না।

গ্যাস সংকটে শুধুমাত্র বাসাবাড়ির বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন তাই নয়, ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সিএনজিচালিত গণপরিবহণ চালকেরাও। নগরীর বেশিরভাগ সিএনজি ফিলিং স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামের সকল ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভোর থেকে দেখা যাচ্ছে ছোট-বড় সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও মিনিবাসের দীর্ঘ সারি। যার প্রভাবে নগরীতে দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট।

মাস্তুরা আর সবুরের মতো অসংখ্য মানুষ চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে পড়ে নাকাল। সকাল থেকে রাত চুলায় নেই আগুন। চট্টগ্রামের সর্বত্র এখন এই অবস্থা বিরাজমান হলেও হুঁশ নেই কেজিডিসিএল কর্মকর্তাদের এমন অভিযোগ নগরবাসীর।

এদিকে কর্মকর্তারা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে স্বাভাবিক হারে গ্যাস আসছে না। গৃহস্থালির পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প কারখানা, সিএনজি স্টেশন, হোটেল-রেস্টুরেন্টেও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে এই সংকটের সহসা উত্তরণ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা।

বিজিএমইএ’র পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী জানান, গতকাল বুধবার দুপুর থেকেই গ্যাস নেই। আজ বৃহস্পতিবারও একই অবস্থা। এমতাবস্থায় কাজ চালানো অসম্ভব। আমাদের প্রোডাকশন আপাতত বন্ধ আছে । এর বড় প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমরা পাচ্ছি ১৯০-২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার ফলে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top