চট্টগ্রামের মোড়ে মোড়ে কোরবানির মাংস কেনা-বেচার হিড়িক 

উজ্জ্বল দত্ত : পবিত্র ঈদুল আযহায় ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে পশু কোরবানি দেন অনেকেই। আবার নিম্ন আয়ের অনেকের ইচ্ছা থাকলেও পশু কোরবানী দিতে পারেন না। ঈদের দিন দেখা যায়, এসব নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই কোরবান দাতাদের কাছ থেকে মাংস পেয়ে থাকেন।

কেউ পান খুঁজে, আবার কেউ পান কাজের বিনিময়ে। তবে কোরবানের দিন পাওয়া এসব মাংস অনেকেই বাসায় নিয়ে যান। ঈদের খুশিতে পরিবার পরিজন নিয়ে খান। আবার কেউ কেউ টাকার জন্য পাওয়া কোরবানীর মাংসগুলো বিক্রি করে দেন।

আর এই মাংসগুলোর অধিকাংশ ক্রেতা নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা সামর্থ না থাকাতে কুরবানি দিতে পারেনি আবার কোথাও গিয়ে চেয়ে মাংসও আনতে পারেনি এমন। তবে নিম্ন আয়ের মানুষদেরও কম টাকায় অধিক মাংস পাওয়ার ভালো উৎস বটে এসব অস্থায়ী মাংসের বিকিকিনির হাট।

সরেজমিনে দেখা গেছে— শনিবার ঈদুল আযহার প্রথম দিন দুপুরের পর থেকে নগরের বিভিন্ন স্পটে কোরবানির মাংসের এসব হাট বসেছে। নগরীর বহদ্দার হাট, চকবাজার, দুই নম্বর গেইট, ওয়াসা, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, কাজীর দেউড়ি, টাইগার পাস, দেওয়ান হাট, আন্দরকিল্লাসসহ প্রায় সবকটি স্পটেই এই মাংসের হাট বসতে দেখা গেছে। তবে বহদ্দারহাট, চকবাজার, আন্দরকিল্লায় বেশি সমাগম চোখে পড়েছে। মাংসের হাটে কেউ থলেতে করে মাংস বিক্রি করছেন। আবার কেউ সে মাংস কিনে নিচ্ছেন চোখের আন্দাজে পরখ করে।

বহদ্দারহাট মোড় পুলিশ বক্সের সামনের ফুটপাতে মাংস বিক্রি করতে আসা সালাউদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, শমসের পাড়া এলাকায় কসাইগিরি করেছি সকালে। ভাল সম্মানি পেয়েছি। আবার উনারা কিছু মাংসও দিয়েছেন। তাছাড়া আমার ছেলেও মাংস পেয়েছে। ছেলেকে কিছু মাংস নিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। বাকিগুলো আমি এখানে বিক্রির আশায় বসেছি। বাসায় ফ্রীজ নেই, এত মাংস কী করব? বিক্রি করলে কিছু টাকা হলেও পাবো।

কাজীর দেউড়ির মোড়ে মাংস বিক্রি করতে এসেছেন জোৎসা আরা। তার মত এই মোড়ে আরও কয়েকজনকে দেখা গেল। তিনি বলেন, আমি আসকার দিঘীর পাড়ে থাকি। বছরের অন্য সময় বস্তির (বাবুর্চি) সাথে মসল্লা বাটার কাজ করি। আজকে এক বাড়িতে মসল্লা বাটার কাজ আছিল। ওই বাড়ির আপা আমারে হাড্ডিসহ প্রায় দুই কেজি মাংস দিছে। আরও কয়েক জায়গা থেকেও পাইছি। অল্প বিক্রি কইরা দেব।

কাজীর দেউড়ি মোড়ে এক বিক্রেতার কাছ থেকে মাংস কিনেছেন মো. সোলায়মান। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে কোরবান করি না। আগে কয়েকজনে মিলে কোরবান করতাম। এখন সামর্থ নেই তাই এখান থেকে মাংস নিচ্ছি। আরও কয়েকজনের কাছ থেকেও আমি কিনেছি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার কেজির মত মাংস নিয়েছি।

অক্সিজেন এলাকায় একাই কয়েক থলে মাংস নেওয়া আব্দুল জব্বার বলেন, আমার ছোট দুইটা খাবারের হোটেল আছে। আমি প্রতি বছর কোরবানীর মাংস এসব মোড় থেকে বেশি করে কিনে রাখি। অন্যান্য সময় মাংসের দাম বেশি থাকে। এখান থেকে নিলে কেজি প্রতি ৫০০ টাকার মতো পড়ে। এগুলো ভালো করে ধুয়ে ফ্রীজে রেখে দিই।

তবে এসব মাংস কেনা থেকে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এসব মাংস দীর্ঘক্ষণ উন্মুক্ত থাকায় দ্রুত ব্যাকটেরিয়া-ফ্যাঙ্গাস মাংসে প্রবেশ করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top