চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ দিতে ৫ম সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১২ মে) নগরীর প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সমাবর্তন আয়োজনের বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
এসময় উপাচার্য বলেন, আগামী বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ২৩ হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করবেন। এ সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট, ডিগ্রি প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অতিথিসহ প্রায় ২৫ হাজার লোকের বসার জন্য মূল প্যান্ডেল রেডি হচ্ছে।
সমাবর্তনের প্রধান বিষয় হচ্ছে সার্টিফিকেট প্রদান বা গ্রহণ। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ সনদ প্রস্তুতির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বিভাগ বা ইনস্টিটিউটগুলোতে সার্টিফিকেট পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। রাত-দিন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ কাজ করে যাচ্ছে।
সমাবর্তীদের জন্য যা যা আয়োজন
চবি উপাচার্য প্রায় ২৩ হাজার সমবর্তীর জন্য যেসব আয়োজন থাকছে তার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে বলেন— আপ্যায়ন কমিটি তাদের কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করছে। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এমব্রেসিয়া ও বারকোডের সকল ফ্যাসিলিটিস ক্যাম্পাসে নিয়ে এসে তিনটি স্থানে রান্নার আয়োজন চলছে। অতিথি এবং সমাবর্তীদের উপযুক্ত খাবার পরিবেশনের লক্ষ্যে সামগ্রিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। চট্টগ্রামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি ফ্রুটস ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়েছে। ১৪ মে সকাল ১০টার মধ্যে খাবারগুলো বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলোতে পৌঁছে যাবে এবং সমাবর্তীদের সকাল ১০টা – ১২টার মধ্যে বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হবে।
যাথায়াতের বিষয়ে উপাচার্য বলেন—পুলিশ প্রশাসন এবং আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে যাতায়াত অসুবিধা মিনিমাইজ করার চেষ্টা চলছে। ১০০টি বড় বাস শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সকাল ৬টা থেকে যাতায়াত শুরু করবে। নির্ধারিত শাটল ট্রেনে করেও সমাবর্তীরা যেতে পারবেন। ১ নম্বর মূল গেট থেকে ক্যাম্পাসে সাধারণ কোন যানবাহন, টেক্সি বা কার প্রবেশ করতে পারবে না। ১ নম্বর গেট থেকে শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে সমাবর্তীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারেন। ক্যাম্পাসেও শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে।
নিরাপত্তার বিষয়ে সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন— নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি এবং প্রশাসনের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী সমাবর্তীদের কাছে ফোন যাচ্ছে। এটি অনেকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছে। ফেসবুকে মন্তব্য করছেন। এটি পেনিক হওয়ার মত কিছু নয়। কনভোকেশন কার্ড পেলে সে স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন, যদি না পুলিশ বা সংস্থা থেকে কাউকে বিশেষভাবে নিষেধ করা না।
ড. কামাল আরো বলেন— সমাবর্তীদের জন্য গিফট আইটেম রেডি হচ্ছে। গিফটের মধ্যে থাকবে ব্যান, স্মরণিকা, কলম, পিন, ওয়ালেট ইত্যাদি। কনভোকেশন টুপি নিরুট হিসেবে বিবেচিত হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন সেজন্য লাইভে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা হচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে চারটি পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামিম উদ্দিন খান বলেন— ৫ম সমাবর্তনে ৪২ জন পিএইচডি, এবং ৩৩ জন এম. ফিল, ডিগ্রিসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কলা ও মানববিদ্যা ৪ হাজার ৯৮৮ জন, বিজ্ঞান ২ হাজার ৭৬৬ জন, ব্যবসায় প্রশাসন ৪ হাজার ৫৬৩ জন, সমাজ বিজ্ঞান ৪ হাজার ১৫৮ জন, জীববিদ্যা ১ হাজার ৬৮৫ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৯৬ জন, আইন ৭০৩ জন, শিক্ষা ৩১৭ জন, মেরিন সায়েন্স ২৮৪ জন, চিকিৎসা ২ হাজার ২৯৬ জন বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তদের বরণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন— সমাবর্তী ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম – বীর প্রতীক, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম ও ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ।
অংশগ্রহণকারীদের জন্য যেসব নির্দেশনা
কনভোকেশন কার্ড হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং এটা প্রদর্শন করে গাউন ও টুপি নিতে হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদেরকে বিভাগ/ইনস্টিটিউট/নির্দিষ্ট বুথ থেকে ১৪ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে অবশ্যই প্রবেশ (আইডি) কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। আইডি কার্ড ছাড়া নিরাপত্তাবাহিনী কাউকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের অনুমতি দিবে না। অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা সোমবার (১২ মে) ও মঙ্গলবার (১৩ মে) অফিস চলাকালীন (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত) গাউন সংগ্রহ করতে পারবেন। ১৪ মে সকাল ৭টা থেকে অবশিষ্ট গাউন বিতরণ করা হবে।
ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না
গ্র্যাজুয়েটদের ব্যক্তিগত কোন গাড়ি ১ নম্বর মূল গেট (হাটহাজারী রোড) থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার জন্য ১ নম্বর গেট থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। গ্র্যাজুয়েটদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট যথা- ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, জমিয়াতুল ফালাহ, পলিটেকনিক মোড় (ফ্লাইওভার থেকে নেমে) থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করবে এবং ক্যাম্পাস থেকে ফিরতি বাসগুলো বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলবে।
শাটল ট্রেনের সময়সূচি
বটতলী স্টেশন থেকে ৭টা ৫ মিনিট ও ৭টা ৪০ মিনিট, ষোলশহর স্টেশন থেকে সাড়ে ৯টা, ১০টা ৫মিনিট, সাড়ে ১১টা এবং ফিরতি ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে ৪টা ৪০ মিনিট, ৬টা ২০মিনিট এবং ৯টা ৪৫ মিনিট। সমাবর্তন দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের সময়সূচি ও পরিবহন বিষয়ক বিস্তারিত দিকনির্দেশনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (http://www.cu.ac.bd) পাওয়া যাবে।
যে সব গ্র্যাজুয়েট অঙ্গীকারনামা আপলোড করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন অথবা যাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড নাই, তারা অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন কার্ড অথবা ৩০০ টাকার পে-অর্ডার নিয়ে আসবেন, যা গাউন নেয়ার সময় অবশ্যই জমা দিতে হবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ