খাল উন্নয়নে অস্থায়ী বাঁধ, ভোগান্তিতে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ চলছে। একই সাথে ড্রেন সংস্কার, উন্নয়ন কাজও চলমান। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট খালগুলোতে মাটি দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে বাঁধ দেয়ার কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টি হলে বা জোয়ারের পানি আটকে গিয়ে উপচে পড়ছে সড়কে। এতে পথচারী ও যানবাহন চালকদেরকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নগরের বহদ্দারহাট খাজা রোডস্থ বহদ্দারবাড়ি পুকুর পাড়, বহদ্দারহাট-মুরাদপুর সড়কের পূর্বপাশের খালে সংস্কার কাজ চলছে। আন্দরকিল্লা নবাব সিরাজদ্দৌলা রোড খলিফা পট্টি সংলগ্ন খালেও চলছে খনন ও সংস্কার কাজ। রহমতগঞ্জ জামালখান খালে খনন ও সংস্কার কাজ চলছে। এ কারণে খাল ও সংলগ্ন বড় নালার মধ্যবর্তী স্থানে মাটির বাঁধ দেয়া হয়েছে। এ বাঁধের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার খাল ও বড় নালা দিয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না। বাঁধগুলো দেয়া হয়েছে যাতে খাল বা নালায় কাজ চলাকালীন সময়ে পানি প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু সেই মাটির বাঁধগুলো এখন পানি প্রবাহে বাঁধা প্রদানের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টিরও নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এতে করে সামান্য বৃষ্টি বা জোয়ারের পানি এলেই তা বাঁধে আটকে তা সংশ্লিষ্ট সড়ক ও এলাকায় উপচিয়ে পড়ছে। আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নালার কালো দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি মাড়িয়ে পথচারী, স্থানীয় ও যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে।

জামালখান শরীফ কলোনির বাসিন্দা শান্তনু মল্লিক বলেন, মাস দুয়েক ধরে পানিতে কষ্ট পাচ্ছি। খালের কাজ চলছে তাই প্রায় সময় পানি জমে সড়কে উঠে যাচ্ছে। বাচ্চাদেরকে স্কুলে নিতে খুব কষ্ট হয়।

বহদ্দারহাট খাজা রোডের এসএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সফিউল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে জোয়ারের পানি উঠছে। দুপুরের দিকে পানি উঠলে তা নামতে নামতে রাত হয়ে যায়। পানির কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠছে।

এ ব্যাপারে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হাসান বিন শামস বলেন, খাল খনন ও সংস্কারের সময় নির্দিষ্ট পরিমান জায়গাকে বদ্ধ করে কাজ করতে হয়। এজন্য খালের খনন ও সংস্কার কাজ চলাকালীন মাটির ক্ষণস্থায়ী বাঁধ করা হয়। কাজ শেষ হলে মাটিগুলো আবার পরিস্কার করে ফেলা হচ্ছে। তবে কাজ চলাকালীন সময়ে পানি আটকে থাকায় সড়কে উঠে যাচ্ছে। এটা উন্নয়নের ভোগান্তি। আপনার ঘর নির্মাণ করতে হলে আপনাকে হয়ত ভাড়াবাসা নয়তো আপদকালীন আশ্রয়ে থাকতে হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ কষ্ট তো করতেই হবে। তবে এ কষ্ট সাময়িক। দ্রুততার সাথে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর মধ্যে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প ও দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চউকের ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটির কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top