ইঞ্জিন সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে রেল, কমেছে সেবার মান

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নিরাপদ যাত্রায় মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম বাহন রেল। এক সময় রেলওয়ে ব্যবস্থায় সেবার মান তুঙ্গে থাকলেও দিন দিন ইঞ্জিন সংকটে চাহিদা অনুযায়ী যাত্রীদের সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর এতেই যেন জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছে এক সময়ের জনপ্রিয় বাহন এই রেল।

দেশে জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে রেলওয়েতেও বেড়েছে যাত্রীদের চাহিদা। তবে প্রতিবারই যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিন সংকটে একপ্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলছে রেল। ইতোমধ্যেই ইঞ্জিন সংকটে বন্ধ রয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মোট ৩৭টি ট্রেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে মোট ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৮টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৬২টি। পূর্বাঞ্চলে ৫৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি কমিউটার ও মেইল ট্রেনসহ মোট ৬০টি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে ৮টি কন্টেনার ট্রেন এবং ১৯টি গুডস ট্রেন চলাচল করে।

এদিকে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ থাকা ৩৭টি ট্রেনের তালিকায় দেখা যায়, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ রুটে চলাচলকারী দুইটি লোকাল ট্রেন, ময়মনসিংহ-ভৈরব বাজার রুটের চারটি লোকাল ট্রেন, সিলেট-ছাতকবাজার রুটের চারটি ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের জালালাবাগ এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের দুটি ট্রেন রয়েছে বন্ধের তালিকায়।

আরো আছে চট্টগ্রাম-নাজিরহা রুটে দুইটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চারটি, লাকসাম-নোয়াখালী রুটে দুইটা ট্রেন, চট্টগ্রাম-পটিয়া রুটের দুইটি কমিউটার ট্রেনসহ ঢাকা-যমুনা সেতু, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ভুয়াপুর মিলিয়ে বন্ধ রয়েছে মোট চারটি ট্রেন। আর এই সকল ট্রেন বন্ধের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ইঞ্জিন সংকটে।

ইঞ্জিন সংকটের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লোকো মাস্টার (ট্রেন চালক) বলেন, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে কাগজে কলমে ১৪০টি ইঞ্জিন থাকলেও পাওয়া যায় ৮০ থেকে ৮২টি। এরমধ্যে বেশ কিছু বিকল ও কিছু মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে পড়ে আছে।

তিনি জানান, যে কয়টি ইঞ্জিন আছে তার মধ্যে ৮২টি ইঞ্জিনই ২০ বছরের পুরোনো। তবে রেলওয়েতে একটি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুস্কাল ধরা হয় ২০ বছর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ১১৩ থেকে ১১৬টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। তবে ইঞ্জিন বিকল নষ্ট ও মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে থাকায় চাহিদা মতো পাওয়া যায় না। এরফলে ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ সিমার বাইরে গিয়ে বিশ্রামে না রেখে চালাতে হয়। ফলপ্রসূ আমাদের মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝপথেই বিকল হয়ে পড়ে ইঞ্জিন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের দেশে রেলের ইঞ্জিন উৎপাদন হয় না, বিদেশ থেকে আনতে হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অর্ডার দিলে ইঞ্জিন পেতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যায়। তবে আমাদের নতুন ইঞ্জিন কেনার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এমকেএন

Scroll to Top