নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) সিট পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের পরম যত্নের সন্তানকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে আইসিইউ’র একটি সিট পেতে হাহাকার করতে থাকেন অসুস্থ শিশুর মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন। ভাগ্যের জোরে কেবল জুটে আইসিইউর সিট।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে দুই ওয়ার্ড মিলে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০০টি। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই প্রয়োজন পড়ে কারও না কারও আইসিইউ সেবা। আর এই আইসিইউ সেবা পেয়ে থাকে মাত্র ১০ শিশু। যা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর সংখ্যার তুলনায় নিতান্তই কম।
জানা গেছে, আগে আইসিইউ সেবা নিতে বাইরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হতো চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডকে। এতে দৈনিক গুনতে হতো ৮-১০ হাজার টাকা। পরে শিল্পগ্রুপ পিএইচপির সহযোগিতায় চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ২০১৫ সালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট শিশুদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রটি চালু করা হয়। এখানে কোনো খরচ ছাড়ায় এই সেবা পাচ্ছেন সংকটাপন্ন রোগীরা। ফলে জটিল শিশু রোগীদের মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে চমেক শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহম্মদ জাবেদ বিন আমিন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাঝেমধ্যে আইসিইউ সেবা দিতে হয়। এই বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের জটিল রোগীদের এই সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে সিট সংখ্যা কম হওয়ায় মাঝেমধ্যেই অনেক রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা সম্ভব হয় না। যার অবস্থা সব চাইতে বেশি সংকটাপন্ন তাকেই আইসিইউতে রাখা হয় এবং সিট খালি হলে তারপর অন্য কাউকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০০ শয্যার শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে এক প্রকার গাদাগাদি করেই আছেন প্রায় দুই শতাধিক রোগী। শিশু আইসিইউ’র ১০টি শয্যাই পরিপূর্ণ। এর বাইরেও আরো বেশকিছু রোগীর স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন আইসিইউ’র একটি শয্যা খালি হওয়ার।
অপেক্ষমান ফারজানা আক্তার নামে এক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বাবুর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার বলেছে আমার বাবুকে আইসিইউতে নিতে হবে, তবে সিট খালি নেই। বাবুর অবস্থা খুবই খারাপ, আইসিইউ’র একটি সিটের জন্য অপেক্ষা করছি। কখন সিট পাবো কিছুই জানি না।
এ ব্যাপারে চমেক শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ মুসা বলেন, আইসিইউ সেবা চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০ জন রোগী থাকছে। তবে শয্যা সংখ্যা মাত্র ১০টি হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের আমরা আইসিইউ সেবা দিতে ব্যর্থ হই।
চমেক শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের শিশু আইসিইউ নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ মুসা আরো বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের আইসিইউর সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে আরো ১০টি অতিরিক্ত শয্যা বসানো হবে। এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। এরফলে শিশু আইসিইউতে শয্যা সংকটে আর কোন শিশুর মৃত্যু হবে না।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ