‘মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে’

ট্রেন ছিনতাইয়ের বিবরণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য বেলুচিস্তানে গত মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন ছিনতাই ও যাত্রীদের জিম্মি করেছিল বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।

ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে সব হামলাকারীকে নিধন করে ট্রেনটির ৪৫০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

উদ্ধার এই যাত্রীরা ভয়াবহ এই ঘটনার অভিজ্ঞতা বিবিসির সঙ্গে শেয়ার করেছেন। ইশাক নূর নামের এক যাত্রী বলেছেন, “যখন গুলি চলছিল, ভয়ে-আতঙ্কে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ আমরা জানতাম না যে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে।”

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। এরপর দুপুর প্রায় ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হওয়ার খবর আসে।

হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বিএলএ। বার্তায় বলা হয়, কারাগারে বন্দি সব বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে ট্রেনের যাত্রীদের সবাইকে হত্যা করা হবে। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বিএলএ।

হামলার সময় ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্য।

জিম্মিদের ‍উদ্ধারে বুধবার থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ জনকে হত্যা করে বিএলএ যোদ্ধারা।

উদ্ধার এই যাত্রীদের একজন মুহম্মদ আশরাফ। লাহোরে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোয়েটা থেকে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। বিবিসিকে আশরাফ বলেন, “যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।”

ছিনতাইয়ের পরপরই অবশ্য কয়েকজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়তে পেরেছিলেন। মুহম্মদ আশরাফও তাদের মধ্যেম একজন। আশরাফ জানান, ট্রেন থেকে নামার পর পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা।

“আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছের স্টেশনের দূরত্ব হাঁটা পথে ৪ ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুও ছিল বেশ কয়েকজন।”

মোহাম্মদ নূর নামে আরেক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। যখন হামলা ঘটে, সে সময় ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গুলি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী।

“আমি আর আমার স্ত্রী ঢাল হয়ে সন্তানদের আড়াল করছিলাম। যাতে গুলি যদি আসে, তা যেন তাদের গায়ে না লাগে,” বিবিসিকে বলেন নূর।

মুশতাক মুহম্মদ নামের আরেক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, “আমরা তীব্র আতঙ্কে ছিলাম। হামলাকারীদের কথা প্রায় কিছুই বুজতে পারছিলাম না, কারণ তারা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল— এ যাত্রা আর বেঁচে ফিরতে পারব না।”

সূত্র : বিবিসি

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top