কড়া নজরদারিতে কমেছে বন্দর জলসীমার দস্যুতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমা অর্থ্যাৎ বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতার ঘটনা এক সময় ভয় ধরাতো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজের ক্যাপ্টেনদের। এ নিয়ে লোকমুখে রয়েছে হাজারো কল্প-কাহিনি।

কয়েক দশক আগেও চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় ব্যাপক হারে দস্যুতার ঘটনা ঘটতো। কিন্তু চলতি বছর তা কমে এসেছে একেবারে শূন্যের কোঠায়। আর এই তথ্য প্রকাশ করেছে এশিয়ায় জাহাজে চুরি-ডাকাতি ও দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা- রিক্যাপ।

রিক্যাপের তথ্য মতে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের জলসীমায় মোট ২৪টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়, যা এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। এই সর্বাধিক দস্যুতার রেকর্ড দেখে নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। জোর দিতে থাকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এপর ২০১৩ সালে তা নেমে আসে ৬টিতে এবং ২০১৯ সালে পৌঁছায় শূন্যে কোঠায়।

তবে ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় মাত্র একটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হলেও, আবারো উদ্বেগ শুরু হয় ২০২৪ সালে। বাড়তে থাকে দস্যুতার ঘটনা। একে একে এই দস্যুতার সংখ্যা দাড়ায় ১২টিতে। আবারো জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মনোনিবেশ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, চলতি বছর উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে দস্যুতার ঘটনা। যা দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সফলতাকে নির্দেশ করে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরে চলতি বছর (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) একটিও দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যপারে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং বিদেশি জাহাজগুলোর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন নিয়মাবলী তৈরি করা হয়েছে, যাতে দস্যুতা প্রতিরোধে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

জানা যায়, দস্যুতা প্রতিরোধে কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বিত অভিযানগুলো দস্যুদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপন করা হয়েছে নতুন প্রযুক্তি ও সিসিটিভি ক্যামেরা। যা বন্দরের জলসীমায় নজরদারিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, যদি এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি নিরাপদ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সামুদ্রিক দস্যুতার বিরুদ্ধে এই কার্যকরী পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করবে।

এই ব্যাপারে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ২০২৪ এর দস্যূতার ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই দস্যুতার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে আমরা দস্যূদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছি। দেশের জলসীমায় দস্যুতার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ ও কার্যকরী বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করবো।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top