নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের রাউজানে দেড় মাস আগে নামাজ পড়তে যাবার পথে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অস্ত্র-গুলিসহ দুজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তথ্য দিয়েছে, জাহাঙ্গীরকে চাঁদার জন্য খুন করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে নগরীর নাসিরাবাদে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সানতু এ তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার (৫ মার্চ) রাতে পুলিশ রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের গরীর উল্লাহপাড়া থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার দুজন হলেন- আরাফাত মামুন ও বিপ্লব বড়ুয়া। তাদের কাছ থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি ভর্তি রিভলবার, একটি রাম দা ও একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও দুইটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, আরাফাত মামুন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। তিনি সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডস্থল এবং আশেপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তারা চাঁদা দাবি করেছিলো বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। মূলত এ চাঁদার জন্যই খুন করা হয়েছে।’
নিহত জাহাঙ্গীর আলম রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ওই এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারের মালিক ছিলেন। এছাড়া নগরীর আসাদগঞ্জ এলাকায় তার শুটকির ব্যবসা ছিল।
গত ২৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) দুপুরে মোটরসাইকেলে চড়ে রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এসময় মোটরসাইকেল চালক তার মামাতো ভাই মো. আব্বাস উদ্দিন গুরুতর আহত হন। শর্টগানের গুলিতে জাহাঙ্গীর আলমের মাথা ও পিঠ গুরুতর জখম হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে মাকসুদ আলম বাদী হয়ে রাউজান থানায় অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের পরিবারের করা মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সর্বশেষ আরাফাত মামুন ও বিপ্লবসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামুন ও বিপ্লবকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে এসপি সাইফুল বলেন, ‘মামুন পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের গরীর উল্লাহপাড়ায় তার মামার বাড়িতে সহযোগী বিপ্লবকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাকে গ্রেফতারের অভিযানের সময় পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।’
সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের কোনো দল নেই। কিন্তু প্রত্যেক অপরাধী রাজনৈতিক আশ্রয় চায়। সে হিসেবে তারা আশ্রয় নেয়।’
থানার সিডিএমএস যাচাই করে দেখা যায়, আসামি আরাফাত মামুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে—আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে ১টি, মারামারি মামলা ২টি, অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলা ২টি, হত্যা মামলা ১টিসহ ৬টি মামলা রয়েছে রাউজান থানায়। এছাড়াও সিএমপি চকবাজার থানায় ১টি হত্যা মামলা ও চান্দগাঁও থানায় এনআই অ্যাক্টের ১টি মামলা রয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/তাহফিম/এসএ