‘আমার মেয়েদের কারণে যদি আ.লীগের পতন হয় এ দায়ভার আমার’

ফেসবুক লাইভে সাবেক কাউন্সিলর হাসনী

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর  এক ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী।

নিজের এবং পরিবারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলোর জবাব এবং আওয়ামী লীগের জন্য বিগত সময়ে কী কী করেছেন লাইভে সেগুলো তুলে ধরেন।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার দুই মেয়ের সমর্থন বিষয়ে হাসনী বলেন— ‘আমার দুই মেয়ের ফেসবুক পোস্টের জন্যে যদি আওয়ামী লীগের আজকের এই পরিণতি হয় তাহলে বাবা হিসেবে আমি এর দায় নিচ্ছি। এটা পুরোপুরি আমার ব্যর্থতা’।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ২৬ মিনিটের একটি লাইভে নিজের পরিবার ছাড়াও নানান বিষয় নিয়েও কথা বলেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্ররা আন্দোলন কেন গিয়েছিলো, কেন সবাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গিয়েছিলো প্রশ্ন তুলে হাসনী বলেন— আমরা ছাত্রদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ আমরা ছিলাম মোহে, টাকার মধ্যে, গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে, ব্যক্তি পূজার মধ্যে। এই রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ আজ আমাদের এই পরিণতি।

তবে তার লাইভে এই বক্তব্যে সমালোচনা করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে তিনি এই আন্দোলনকে জামাত শিবিরের আন্দোলন না বলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বলেছেন। যেখানে শেখ হাসিনা এটাকে জুলাই ষড়যন্ত্র বলে থাকেন। যিনি নিজের দুই মেয়েকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি কিভাবে কর্মীদের গাইড করবেন সেই প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।

নিজের মেয়েদের জুলাই আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট দেওয়াকে গণতন্ত্রের চর্চা বলে লাইভে দাবি করেছেন সাবেক প্যানেল মেয়র হাসনি। তার এই বক্তব্যের সমালোচনায় কমেন্টে একজন লিখেন, তাহলে কি আওয়ামী লীগের আমলে গণতন্ত্র ছিল না?

জানা গেছে, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর দুই মেয়ে রাইসা হাসিন চৌধুরী ও ফারহিন হাসিন চৌধুরী ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তারা নিজেদের ফেসবুক ওয়াল লাল করে ছাত্রদের পক্ষে এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে বেশ কিছু স্ট্যাটাস শেয়ার করেন।বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও মেয়েদের দেয়া এসব স্ট্যাটাসের স্ক্রীনশট ঘুরছে আত্মগোপনে থাকা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুকে। যা নিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। সেসব সমালোচনার জবাব দিতেই অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি লাইভে আসেন।

নিজের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি লাইভে বলেন, আপনারা কী করেছেন সেটা চিন্তা করুন। লাইভে তিনি নিজের একটি পৈত্রিক বিল্ডিং, দুইটি ফ্ল্যাট আছে বলে জানান। এর বাইরে কোনো স্থাবর সম্পদ এবং ব্যাংকেও তার কোনো একাউন্টে কোটি টাকা থাকলে তিনি তা জনগণের জন্য দিয়ে দেবেন বলে জানান। এই সময় তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করে কোথাও কোনো টেন্ডার বাণিজ্য কিংবা টাকা পয়সার জন্য গিয়েছেন বা তদবির বাণিজ্যে ছিলেন এমন উদাহরণ কেউ দেখাতে পারবে না বলেও লাইভে দাবি করেন।

এই সময় তিনি দলের তার সমালোচকদের জায়গা দখলসহ চাঁদাবাজি এবং গণপিটুনি ও মামলার আসামি হওয়ার অভিযোগ তোলেন।

বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান সম্পর্কে তার মামা এই সূত্র ব্যবহার করে তিনি টাকা পয়সা অর্জনের যে অভিযোগ উঠেছে সেটাও নাকোচ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন বলেন এইসব অপপ্রচার এবং মিথ্যা।

লাইভে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে অনেক নেতাকর্মী টাকা নিয়ে লিফলেট বিলি না করে ছবি তোলে বাসায় গিয়ে ফেসবুকিং করেছেন। ট্রাক ভাড়া করে আনন্দ করেছেন। কিন্তু জনগণের কাছে গিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন আর বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা ও বুঝাতে অপারগ হয়েছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগের আজ এই পরিণতি।

তিনি নিজে গ্রুপিংয়ের উর্ধ্বে উঠে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ চান অথচ যারা এখন তার সমালোচনা করছেন তারা এখনও গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে ব্যস্ত বলেও জানান।

তিনি লাইভের শেষাংশে নিজেকে সবার ভাই বন্ধু, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও বাংলাদেশে নৌকার জয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক এই প্রভাবশালী কাউন্সিলর। প্রায় ডজনখানেক  মামলার আসামি হওয়া সত্বেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন তিনি। তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠতেই তিনি হঠাৎ ফেসবুক লাইভে মঙ্গলবার রাতে হাজির হন।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top