নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় অবস্থিত ১১০ শয্যা বিশিষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুচিকিৎসার জন্য যেটি প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু গত ২ দশক ধরে স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠান চলছে ধুঁকে ধুঁকে।
জরাজীর্ণ পরিবেশ, পানির সংকট ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্সের অভাব যেন সুচিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য এখন দুর্ভোগের কারণ। এখানে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার থাকলেও এখন হয়না কোনো অপারেশন। কারণ এই হাসপাতালে নেই কোনো সার্জন।
ফলে চট্টগ্রাম রেলওয়েতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ১৫ হাজার কর্মীর চিকিৎসার ভরসাস্থল এই রেলওয়ে হাসপাতাল এখন পুরোদমেই ব্যর্থ সুচিকিৎসা দিতে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ১১০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও, বর্তমানে চিকিৎসক কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন এবং দুইজন গাইনোকোলজিস্ট। অন্যজন হাসপাতালটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
কাগজে কলমে ২২ জন চিকিৎসক হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দ থাকলেও নিয়োগের অভাবে হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট প্রকট। এছাড়াও নার্সের সংখ্যা ১৬ জন হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে মাত্র ৪ জন জুনিয়র নার্স কাজ করছেন। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা চিকিৎসাপ্রার্থীরা।
বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে হাসপাতালের প্রধান সহকারী জিয়াউর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে পানির সমস্যা। আমাদের কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও কোনো সমাধান আসেনি। হাসপাতালের পানির সরবরাহ অনিয়মিত এবং যে পানি আসে সেটিও ব্যবহারের অনুপযোগী।
চিকিৎসা সেবা নিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাহামিনা ইয়াসমিন চাটগাঁ নিউজকে জানান, রেলের অনেক কর্মচারী বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আমাদের কাছে আসেন। তবে চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে আমরা তাদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারি না।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে ডা. তাহামিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার আছে, কিন্তু এখানে ভারী অপারেশন সম্ভব নয়। কারণ আমাদের সার্জনের অভাব রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— হাসপাতালের সুবিধাগুলোর মধ্যে তিনটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন এবং ১৬ ধরনের ব্লাড টেস্ট বিনামূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। তবে এসব সুবিধাও রোগীদের জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ হতাশ রেলকর্মীরা। শান্তনু দাশ নামে এক কর্মচারী চাটগাঁ নিউজকে বলেন— এটি নামেই হাসপাতাল, এই হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। আমরা নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারী। আমাদের ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। তাই আমরা চাই আমাদের রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত হোক, সমৃদ্ধ হোক এখানকার চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতালের চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তাহামিনা ইয়াসমিন বলেন, সর্বশেষ ২০১৩ সালে রেলওয়েতে চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো নিয়োগ হয়নি। তবে নতুন চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা চলছে, এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আরো ভালো বলতে পারবে।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদের মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
চাটগাঁ নিউজ/সৈকত/জেএইচ