মোহাম্মদ ইলিয়াছ (বান্দরবান): দীর্ঘ ৪৭ বছরের পুরোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন বন্ধ হবার পথে।দিন দিন শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কর্যক্রমে।
স্থানীয়দের মতে, এক সময় এই বিদ্যালয়ে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী একযোগে পাঠ নিতে আসতো। কিন্তু এখন শিক্ষার্থী কাগজে কলমে ১০২ জন থাকলেও, বাস্তবে শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত মোটে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী দেখা যায়।
স্থানীয়দের দাবি, শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে স্কুলটির এই দশা। কারণ শিক্ষকরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না আর শিক্ষা অফিস তাদেরকে তদারকিও করেন না। বলছি বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পূর্বচাম্বি মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি। ঠিক মতো শিক্ষক না আসা, ঠিক মতো ক্লাস না হওয়া বিদ্যালয়টির জন্য নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।
তাছাড়া বিদ্যালয়ে অনেকগুলো শ্রেণী কক্ষ থাকার পরও যে ক’জন বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থী রয়েছে তাদেরকে একসাথে একই কক্ষে একজন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কারন এই বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক একই দিনে একই সাথে আসেন না। তারা রুটিন করে একেকদিন একেকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পড়াতে আসেন।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে দুইজন শিক্ষক এসেছে। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন নামের একজন শিক্ষক বিভিন্ন ক্লাসের মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীকে একসাথে নিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের বাহিরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এদিক ওদিক হাঁটাহাটি করছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা চেক করে দেখা যায়, শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত হাজিরা খাতায় মোট ১০২ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিদিন শতভাগ উপস্থিতিও দেখানো হয়েছে। তবে সরেজমিনে পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া যায় মাত্র ১০ জন।
বিদ্যালয়ের বাহিরে কয়েকজন ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সাথে দেখা হলে তাদের কাছ থেকে বাংলা বর্ণমালা এবং ইংরেজি বর্ণমালা জানতে চাওয়া হলে সঠিকভাবে বলতে পারেনি কেউ।
আর এদিকে আরেকজন শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা সকাল ১১টা বাজেও বিদ্যালয়ে আসেননি। প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি কোন ছুটিও নেন নি। কিছু বললে একসময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখাতো এখন জামাতের ক্ষমতা দেখাচ্ছে।
অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা মুঠোফোনে বলেন, আমি বান্দরবান থেকে আসতেছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় দেরি হয়ে গেছে। অথচ বিগত ১ সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে দেখেনি বলে জানায় স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম জসিমুল আলমের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
স্থানীয় ফারুক নামে এক অভিভাবক জানান, সকাল ১০টা বা ১১টার দিকে গেলে কোন শিক্ষককে পাওয়া যায় না। ১০-১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীও নাই বর্তমানে। শিক্ষকদের কল দিলে তারে কেউ বলে বাড়িতে আবার কেউ বলে অফিসিয়াল কাজে উপজেলায়। বলতে গেলে এখানে কোনো লেখাপড়াই হচ্ছে না।
ইউসুফ নামের বিদ্যালয়টির প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী জানান, এক সময় এই বিদ্যালয়ে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষকদের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
স্থানীয় আরেক অভিভাবক বলেন, স্কুলটা শুধু সরকারি নামে আছে কোন কাজে নাই।
বিষয়টি জানতে চাইলে লামা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টা খতিয়ে দেখে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ