৪৮ ঘন্টার মধ্যে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিতে হবে

মহানগরী জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি জানান  দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

এসময় তিনি বলেন— আজকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। আমরা বন্দি শালার তালা ভাঙতে চাই না।বিগত ১৫ বছর আমাদের রক্ত ঝরেছে, কারাবরণ ও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। বিরোধী দল দমন করার জন্য গায়েবি মামলা দায়ের করেছিল।

তারা জামায়াতকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। যে সাজানো মামলা এবং ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তৎকালীন কথিত রায়ে এটিএম আজহারকে বন্দি রাখা হয়েছে। তিনি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অসংখ্যবার জেল কেটেছেন।

তিনি ১৩ বছরের অধিককাল কারাগারে বন্দি। এভাবে ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত হয়েছে। জামায়াত ইসলামী অন্যায় ও অবিচারের কাছে মাথানত করবে না। ন্যায় বিচারের জন্য ৫ আগস্টে ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে। আমাদেরকে আপনারা বাধ্য করবেন না। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জননেতা এটিএম আজহারকে মুক্তি দিতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহছানুল্লাহ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য জাফর সাদেক, অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান,  অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর আলা উদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, উত্তর জেলা সেক্রেটারি আবদুল জব্বার, নগর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন— নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানজির হোসেন জুয়েল, দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ আরো বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে গ্রেপ্তার করে। তিনি ২০১২ সালে জামিনে মুক্তি পেলেও আওয়ামী সরকার তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মিথ্যা মামলা দিয়ে আবারও তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সম্পূর্ণ নিরপরাধ।

তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তিনি ন্যায় বিচার পাননি। ন্যায়ভ্রষ্ট ও বিচারিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে ফলে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মী মুক্তি লাভ করে।

কিন্তু অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের আজ ছয় মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও এখনো পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি লাভ করেনি। দেশবাসী আশা করেছিল চরম অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের শিকার জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি লাভ করবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তা হয়নি। তাই জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। জামায়াত স্বৈরশাসকের আমলে চরম নির্যাতনের শিকার। আর স্বৈরশাসক মুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগরী জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত। স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তারকৃত এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাঁকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক।

তিনি বলেন, দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। পলাতক স্বৈরাচার খুনী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সমাবেশ শেষে নগর জামায়াতের এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল লালদীঘি থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন রেল স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।

চাটগাঁ নিউজ/টিপু/জেএইচ

Scroll to Top