ভারতীয় দুই লাশ ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেশে ফিরলেও বাংলাদেশি লাশের খবর নেই!

সৌদিতে আগুনে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : সৌদি আরবের রিয়াদে আল বাজ নামের একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে রাশেদুল ইসলাম। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম মৃত্যু হয় রাশেদুলের। কিন্তু মৃত্যুর ১০দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত হতভাগ্য রাশেদুলের লাশটি দেশে ফেরানো যায়নি। এ ব্যাপারে নিহত রাশেদের সহকর্মীরা সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইতিবাচক আশ্বাস পেলেও ফলপ্রসূ কোন উত্তর তারা পাচ্ছেন না।

স্বজনদের অভিযোগ, হতভাগ্য রাশেদুলের লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে গড়িমসি করছে সৌদি আরবীয় আরবাব (চাকরি দাতা)। তারা নিহত রাশেদুলকে বেওয়ারিশ লাশ দেখিয়ে আরবেই দাফন করানোর চেষ্টায় রয়েছেন।

এদিকে, হতভাগ্য রাশেদুলের পরিবার তাদের প্রিয় সন্তানের লাশটি এক নজর দেখতে, প্রিয় জন্মভূমিতে সন্তানকে দাফন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হণ্য হয়ে ঘুরছেন। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের বদৌলতে দপ্তর, প্রতিনিধির দৃষ্টিতে আনতে মিডিয়ার দ্বারস্থও হয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে হতভাগ্য রাশেদুলের বাবা-মা, বোনের স্বামীসহ স্বজনরা হাজির হন সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম কার্যালয়ে।

চাটগাঁ নিউজ প্রতিবেদকের কাছে পুত্রের নির্মম মৃত্যুর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাশেদুলের পিতা মো. জাকির হোসেন বাকরুদ্ধ। পুত্র হারানোর শোকে তিনি নির্বাক। কথা শুরু করতেই কণ্ঠ তার রোধ হয়ে আসছে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতেই বোঝা যাচ্ছে পুত্রহারানো একজন পিতার অব্যক্ত সেই বেদনা।

বেশ কিছুক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হয়ে তিনি বলেন, রাশেদ আমার বড়ছেলে। অনেক আশা নিয়ে তাকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। আল্লাহতা’লা আমার সেই আশা পূরণ হতে দিল না। না জানি কোন অপরাধে আমাকে তিনি এমন শাস্তি দিয়েছেন। আজ ১০ দিন হয়ে গেল, আমার রাশেদ মারা গেছে। সেখানে রাশেদের সহকর্মী আরো দুই ভারতীয়ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। শুনেছি তাদের লাশ ইতোমধ্যেই দেশে ফেরত গেছে। কিন্তু আমার ছেলেটির লাশ নিয়ে চলছে তালবাহানা। রাশেদের সহকর্মীরা বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে তারা বলছে, দূতাবাস রাশেদের লাশ দেশে ফেরাতে প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তো আরবাব পক্ষের সুপারিশ বা আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সহকর্মীদের সাথে ফোনালাপে জানতে পারি, কোম্পানির মালিক নাকি এ নিয়ে গড়িমসি করছেন। কেননা রাশেদকে দেশে ফেরাতে গেলে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসসহ নানা প্রশাসনিক কার্যক্রম রয়েছে। আর এসব করতে গেলে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ মালিকের কাছ থেকে নিহত রাশেদের কর্মস্থল আল বাজ কোম্পানিতে নিবন্ধনকৃত জীবন বীমাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। যার মাধ্যমে রাশেদ তার প্রাপ্য ফিরে পাবে। আর এখানেই বিপত্তি। রাশেদের হালাল প্রাপ্য জীবন বীমা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার টাকা আত্মসাত করার অপচেষ্টায় মালিক পক্ষ তাকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সৌদি আরবে দাফন করিয়ে ফেলতে চায়।

রাশেদের মা ফরিদা বেগমের কান্না, আহাজারিতে চাটগাঁ নিউজ কার্যালয়ের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে সম্পাদক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও স্তব্ধ।
তিনি শুধু একটি কথাই বলে যাচ্ছেন, আল্লাহ আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আমি শুধু এক নজর আমার রাশেদকে দেখতে চাই। আমি শুধু একটিবার আমার যাদুকে বুকে নিতে চাই।

এসময় নিহত রাশেদের বোনের স্বামী মো. নুরুল আজিমসহ অন্যান্য স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

স্বজনরা জানান, রাশেদুল ইসলামের বাড়ি পটিয়া কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে। গত ৩ বছর আগে তিনি সৌদি আরব যান। আসন্ন রমজানের পবিত্র ঈদুল ফিতরে তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দেশে ফিরে পরিবার পরিজনের সাথে তার আর ঈদ করা হলো না। তার আগেই তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top