নিজস্ব প্রতিবেদক : আমদানি খরচের তুলনায় বাজারে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলাচ। অথচ আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে কাস্টমস জানিয়েছে এলাচের শুল্কায়ন মূল্য পুর্নর্বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শুল্ক এড়াতে আমদানিকারকরা আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে প্রকৃত খরচ ১৫-২০ ডলার হলেও কাগজে দেখানো হচ্ছে সাত থেকে সাড়ে সাত ডলার।
জানা যায়, বর্তমানে এলাচের শুল্কায়ন মূল্য সাড়ে ৭ ডলার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আরো কয়েকগুণ বেশি। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, এলাচের প্রকৃত আমদানিব্যয় কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ ডলার। তবে শুল্ক ফাঁকি দিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে সাত থেকে সাড়ে সাত ডলার দেখানো হয় এবং বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।
তারা জানান, এলাচ আমদানিতে প্রায় ৫৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যা প্রতি কেজিতে প্রায় ৫৪০ টাকা। প্রকৃত মূল্য দেখালে শুল্ক দিতে হতো এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা।
এদিকে, বিশ্ব বাজারে এলাচের দাম বাড়লেও দেশে আমদানির শুল্কায়ন মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে বর্তমানে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে, যা সরকারের রাজস্ব হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তবে বিষয়টি নজর এড়ায়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষেরও। এ কারণে এলাচ আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে এলাচ আমদানি হয়েছে ৫৯৬ দশমিক ৭১ টন। তবে এলাচের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য টনপ্রতি ৩০-৩৪ হাজার ডলার হলেও দেশে শুল্কায়ন মূল্য তার চাইতে অনেক কম। ফলে সরকারের প্রায় দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। ফলে এলাচের বাজার মূল্য যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এলাচ ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টন এলাচের চাহিদা রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই এলাচের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। তবে এলাচকে বিলাসবহুল পণ্য না ধরে প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত এবং শুল্ক হার কমিয়ে ২০-৩০ শতাংশ করা হলে আন্ডার-ইনভয়েসিং কমবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার কাউছার আলম পাটোয়ারি বলেন, এলাচের শুল্কায়ন মূল্য কাস্টমস কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলাচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। তবে বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করছি। ইতোমধ্যেই এলাচের বাজার মূল্য যাচাইয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ