মোহাম্মদ ইলিয়াছ: দীর্ঘ ৬ বছরেও বান্দরবানের লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য নির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হলেও চালু করা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক নানা জটিলতায় এ হাসপাতাল ভবনটি পড়ে রয়েছে অচলাবস্থায়। ফলে প্রতিদিনই শয্যা সংকটসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের।
জানা যায়, জেলার কয়েক লক্ষ মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল সদর হাসপাতাল । ২০০৫ সাল থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করা বান্দরবান সদর হাসপাতালটি প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত চাপের মুখে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি শয্যা। ফলে জেলা সদরের পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের থাকতে হচ্ছে মেঝেতে।
এদিকে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে নেই আইসিইউ কিংবা সিসিইউ’র মতো জরুরি সেবা। ফলে সামান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রেও রোগীদের রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোগীদের দুর্দশা লাঘবে ২০১৯ সালে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। সে অনুযায়ী ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রকৌশল শাখা থেকে শুরু হয় নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। যেখানে রাখা হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আইসিইউ, সিসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড, সার্জারি ইউনিট, গাইনি ওয়ার্ডসহ আধুনিক চিকিৎসা অবকাঠামো।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ে ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়ায় তা চালু করা যাচ্ছে না। ফলে লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নতুন এ হাসপাতালটি চালু হলে শয্যা সংকট লাঘব হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে।
চিকিৎসা নিতে আসা ছাইগ্যার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, হাসপাতালের কেবিন খালি না থাকায় মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে। আমার মত অনেক রোগীকে মেঝেতে রাখা হয়। নতুন ভবনটি চালু হলে অন্তত শয্যার অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।
কালাঘাটার সুভাষ দাশ বলেন, পুরাতন ভবনে আইসিইউ-সিসিইউ না থাকায় আমাদের ছোটখাটো সমস্যাতেও চট্টগ্রাম যেতে হয়। অথচ নতুন ভবনে সে সুবিধা রয়েছে। সেটি চালু করলে সেবার মান বাড়বে বলে আমার মনে হয়।
রুমা থেকে আসা পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা ছোহ্লামং মার্মা বলেন, আমার স্ত্রীর দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথার কারণে হসপিটালে আসছিলাম ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু এখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ, তবুও অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. শাহীন হোসেন চৌধুরী বলেন, নতুন ভবনের অবকাঠামোগত সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেই খুব দ্রুত আধুনিক ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে। এটি চালু হলে সেবার মান অনেক বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন






