চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৪৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরদিকে আরও ৯টি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে এক হাজার ৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
৫৪৮ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় অপর আসামিরা হলেন— ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মিফতাহ উদ্দীন, ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দীন, শব মেহের স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান, পরিচালক মোহাম্মদ শওকত উসমান, টপ টেন ট্রেডিং হাউসের প্রোপাইটর মো. আলমাছ আলী, গোল্ড স্টার ট্রেডিং হাউসের প্রোপাইটর বেদারুল ইসলাম ও আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউসের প্রোপাইটর নুরুল আলম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫৪৮ কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানা্ন্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে দন্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং মেসার্স আদিল করপোশন নামের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব পাওয়ার পর সিআইবি রিপোর্ট গ্রহণ, প্যানেল আইনজীবীর কাছ থেকে আইনি মতামত এবং প্রস্তাবিত জামানত সম্পত্তির মূল্যায়ন, গ্রাহকের সক্ষ্যমতা, ঋণের যোগ্যতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেই ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাস করান।
এই অনুমোদিত বিনিয়োগ বা ঋণ সীমা ২০১৭ সালে ৪০০ কোটি টাকা থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণসীমা বৃদ্ধি করান। যার বর্তমান স্থিতির পরিমাণ এক হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ২৯টি ডিলের মাধ্যমে ক্রাফট বিজনেস অ্যান্ড ট্রেডিং হাউস, ইউনিক ট্রেডার্স অ্যান্ড বিজনেস হাউসসহ মোট ৯টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট এক হাজার ৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যা পরবর্তী সময়ে এস আলমের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান— এস আলম অ্যান্ড কোম্পানী, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টীল, চেমন ইস্পাত, গ্লোবাল ট্রেডিংসহ এস আলমের ভাইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে সুনামের সাথে নেতৃত্ব দেয়া ইসলামী ব্যাংক গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘দখলে’ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির সিংহভাগ মালিকানা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ উঠেছে এস আলমের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে ব্যাংকটিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে। এরপর থেকে অর্থপাচারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ