চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বিদেশের কারাগারে ১১ হাজার ৪৫০ জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আজ আজ সোমবার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৩১টি দেশের কারাগারে বাংলাদেশিরা আটক রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আটক আছে সৌদিআরবে। সৌদি আরবে আটক আছেন ৫ হাজার ৭৪৬ জন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আটক আছে এক হাজার ৫৭৯ জন। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কে ৫০৮ জন, ওমানে ৪২০, কাতারে ৪১৫ জন, গ্রিসে ৪১৪ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ জন ও মিয়ানমারে ৩৫৮ জন।
গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়নি
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়নি। জিএসপি সুবিধাকালীন সময়েও গার্মেন্টস পণ্য এর আওতাবর্হিভূত ছিল। এ সুবিধা ছাড়াই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিএসপি পদ্ধতি পুনর্প্রবর্তন করেনি। জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালু হলে তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং গার্মেন্টস পণ্যকেও জিএসপির আওতায় আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনো বিশেষ আঞ্চলিক চুক্তি/সহায়তা কার্যক্রম ছাড়া কোনো দেশই যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সরকার দলীয় এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যার মধ্যে ৮০ কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি দূতাবাস, ১৪টি হাই-কমিশন, ১২টি কনস্যুলেট, ৩টি স্থায়ী মিশন, ৪টি উপ-হাই-কমিশন এবং ৪টি সহকারী হাই-কমিশন রয়েছে। তিনি জানান, আরও কমপক্ষে ৯টি নতুন মিশন স্থাপনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশ শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ আধা-দক্ষ ও অদক্ষ
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার এবং রেমিটেন্সের প্রধান উৎস। সরকারের গত দেড় দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০০৯ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি দ্বিগুণ রপ্তানি হয়েছে। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলে শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ আধা-দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োজিত আছে এবং এ অঞ্চলটি ৬০ শতাংশ রেমিটেন্সের উৎস।
মন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫৩ বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থান ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈধভাবে গমন করেছেন। অবৈধ হয়ে পড়া এ সব বাংলাদেশি নাগরিককে মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি সেদেশে বৈধতা প্রদানে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ২০১৮ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে জেল ও জরিমানা মওকুফ করে দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেয়। কারোনাকালীন কাজ হারিয়ে অবৈধ হওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে ২০২০-২০২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী ভিসা সংকুচিত থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সাল থেকে পুনরায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জর্ডানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কয়েকজন বেশি উপার্জনের লোভে তাদের নিয়োগকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে সেদেশে অবৈধ হয়ে যান। বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রমিকদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে নিয়োগকারীদের সহযোগিতায় কর্মক্ষেত্রে পোস্ট অ্যারাইভাল সেশনসহ নিয়মিত সেশন আয়োজন করে থাকে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস