২৮টি দেশে আম যাচ্ছে ৪ হাজার টন

সিপ্লাস ডেস্ক: বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও এর সামান্যই রপ্তানি হয়। মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আম পচেও যায়, চাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না।

অথচ আমাদের দেশের আমের স্বাদ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় বাংলাদেশের আমের সুনাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে রপ্তানিযোগ্য আমের আবাদ বৃদ্ধি, আধুনিক বাগান ব্যবস্থাপনা এবং নতুন বাজার সৃষ্টির ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

এরইমধ্যে আম রপ্তানি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ আম রপ্তানিতে শীর্ষে যেতে চায়। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে এই প্রথম রপ্তানিবাজার লক্ষ্য রেখে আম উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্পের লক্ষ্য, প্রাথমিকভাবে ৯৩০ উদ্যোক্তাকে বেছে নেওয়া হলেও আগামী চার বছরের মধ্যে সংখ্যাটি ৮ হাজার ৪০০ জনে উন্নীত করা হবে। তাদের উৎপাদিত আম বিশ্বের ২৮টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এর বাইরে নানা উদ্যোগে মান অনুসরণ করে আম রপ্তানি হয়ে থাকে। এমনকি ইউরোপের মূলধারার চেইন শপেও পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের আম। এবছর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

জানা গেছে, আম উৎপাদনে বাংলাদেশ ৭ম অবস্থানে থাকলেও রপ্তানিতে শীর্ষ দেশের মধ্যে নেই। বাংলাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। দেশে আমের উৎপাদন ২৪ লাখ টনের মতো। প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্য হয়। আম উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন, মোড়কীকরণ ও পরিবহন মিলিয়ে এ বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর এপ্রিলে কাঁচা আম বাজারে আসা থেকে শুরু হয় এ বাণিজ্য। চলে সেপ্টেম্বরে আশ্বিনা আম বিপণন শেষ হওয়া পর্যন্ত।

চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন। তবে আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে হিসেবে, ২৮ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে চলতি মৌসুমে।

আম রপ্তানিকারকরা বলছেন, দেশের আমের জাতগুলোর ‘সেলফ লাইফ’ কম, অর্থাৎ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সংগ্রহ-পরবর্তী পর্যায়ে শনাক্তকরণের অভাব, আন্তর্জাতিকমানের প্যাকেজিংয়ের অভাব, আমের ব্র্যান্ডিং ইমেজ সৃষ্টি না হওয়া এবং দক্ষতা, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে বাড়ছে না রপ্তানি।

এছাড়া আম রপ্তানিতে আরেকটি বাধা হলো পরিবহন খরচ। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ভারতের এক কেজি আম পরিবহনে যদি উড়োজাহাজের ভাড়া লাগে ১০০ টাকা, সেখানে আমাদের পড়ে অন্তত ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। ফলে আমরা বেশি দামের কারণে মার্কেট ধরতে পারছি না। এ ছাড়া বাংলাদেশের উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) সনদ প্রদানে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকায় ইউরোপ ও আমেরিকার মূলধারার সুপার মার্কেটগুলোতে আম রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমের গ্যাপ সার্টিফিকেট প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা গেলে বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশে রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডভাইজার মো. মঞ্জুরুল ইসলাম গণ মাধ্যমকে বলেন, আমের দিকে সুনজর দিলে ভবিষ্যতে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা অর্জন সম্ভব। কিন্তু আম রপ্তানির জন্য দরকারি উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বা ফাইটো স্যানিটারি সনদ পেতে দীর্ঘসূত্রিতা এবং উড়োজাহাজের উচ্চহারে ভাড়া প্রদান যা প্রতিযোগী দেশ ভারত, পাকিস্তান বা থাইল্যান্ডের উড়োজাহাজ ভাড়ার চেয়ে আমাদের দেশে ভাড়া অনেক বেশি। এজন্য অনেকেই আম রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

আম ও সবজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিংকের নির্বাহী পরিচালক কাওসার আহমেদ গণ মাধ্যমকে বলেন, আম উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, গবেষক এবং রপ্তানিকারকদের সমন্বয়ের অভাব। এছাড়া মানসম্মত নিরাপদ আম উৎপাদন করা হয় না। আম সংগ্রহের পর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আমদানিকারকদের দেওয়া শর্ত পূরণ করা হয় না। যেমন আম সংগ্রহের পর আমের গুণগত মান বজায় রেখে বাছাই বা গ্রেডিং মোড়কজাত করা হয় না। গাছ থেকে আম সংগ্রহ থেকে শুরু করে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত শীতলীকরণ ব্যবস্থাসম্বলিত বাহনের (কুলিং ভ্যান) মাধ্যমে পরিবহন করা হয় না ফলে আমাদের আমের গুণগত মান বজায় থাকে না। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে আমাদের আম রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য মোড়কজাত করতে ঢাকার শ্যামপুরের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। সেখানে ডিএইর অধীনে রপ্তানির জন্য মোড়কজাতের ব্যবস্থা আছে। যার নাম সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ। আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর সঙ্গে এ প্যাকেটিং হাউজের দূরত্ব অনেক। তাই এত দূর থেকে আম এনে মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোয় একটি করে প্যাকিং হাউজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার গণ মাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের যথেষ্ট সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। ফলে আমকে ব্যাপকভাবে বিশ্ববাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সে জন্য বিভিন্ন রপ্তানি বাধা চিহ্নিত করে তা নিরসনে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ চলছে। প্রকল্প এলাকায় উৎপাদিত উন্নত মানসম্মত নিরাপদ আম উৎপাদন হবে। এতে বাড়বে রপ্তানি। প্রক্রিয়াজাত সহায়তার বাজারজাতকরণে উন্নয়ন ঘটবে। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আম রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। বাংলাদেশে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) সনদ প্রদানে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বিদ্যমান না থাকায় ইউরোপ ও আমেরিকার মূলধারার সুপারমার্কেটসমূহে আম রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। আশা করছি রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে আগামী ২ বছরের মধ্যে অনেক কিছুই তৈরি হবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে শ্যামপুর ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পূ্র্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব তৈরি হচ্ছে, যা আগামী পাঁচ বছরে উৎপাদনের মতো রপ্তানিতেও বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ স্থান করে নিতে সহায়ক হবে। এছাড়া আমের গ্যাপ সার্টিফিকেট প্রদানের প্রয়োজনীয় জনবল ও সক্ষমতা অর্জন করা গেলে বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশসমূহে আম রপ্তানির পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে ২০১৮-২০১৯ সালে ৩১০ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭৯ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৬৩২ মেট্রিক টন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭৫৭ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে খিরসাপাত, হিমসাগর, গোপালভোগ, লেংড়া, আম্রপালি সহ সাত জাতের আম রপ্তানি হয়। এগ্রি-প্রোডাক্ট হিসেবে আম রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয় রপ্তানিকারকদের।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল মেয়াদের প্রকল্পটি ১৫ জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৪৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে মানসম্মত আম উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষক, কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের দক্ষতা বাড়ানো হবে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রকল্প সহায়তায় উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন প্রদর্শনী ৩৫০টি, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন ৬০৪টি, বিদ্যমান আম বাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা ২৪০টি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার (প্রুনিং ব্যাগিং ও বালাই ব্যবস্থাপনা) মানসম্মত আম উৎপাদন প্রদর্শনী ২০০টি স্থাপন করা হয়েছে। মানসম্মত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রদর্শনীসমূহ ক্লাস্টার আকারে স্থাপিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯টি উপজেলায় ৩৭১ জন আম চাষিকে ক্লাস্টার প্রদর্শনীর আওতায় আনা হয়েছে। মানসম্মত আম উৎপাদন ও পোস্ট-হার্ভেন্ট ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে কৃষক গ্রুপে ম্যাংগো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাংগো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতাপাইপ সেট সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান আমবাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কাজ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মানসম্মত আম উৎপাদন ও পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে কৃষক গ্রুপে ম্যাঙ্গো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাঙ্গো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতাপাইপ সেট সরবরাহ করা হবে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানি তরান্বিত করার লক্ষ্যে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে আমের পেস্টরিস্ক এ্যানালাইসিস (পিআরএ) ও উত্তম কৃষি চর্চা তৈরি এবং জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদর্শনী এবং কৃষি প্রযুক্তির তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণের কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া রপ্তানিযোগ্য ৫টি আমের জাতের প্রোডাক্ট প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি আম রপ্তানিকারকদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যাঙ্গোগ্রেডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।

এবিষয়ে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান গণ মাধ্যমকে বলেন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পটি ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য জাতের আমবাগান সৃজন, আমবাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত আম উৎপাদন প্রদর্শনী হবে। আমের পাঁচটি জাতের ‘প্রোডাক্ট প্রোফাইল’ তৈরি করা হবে। আম উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। এবছর ৪ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছর। গত ২৫ মে থেকে চলতি অর্থবছরের আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছরই প্রথম সুইজারল্যান্ডের একটি চেইন শপে বাংলাদেশের আম পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশের আম মূলধারার সুপার মার্কেটে ঢুকল। তাদের কাছ থেকে ভালো রিপোর্ট পেলে আমরা ইউরোপের বড় মার্কেট ধরতে পারব। আর এ রেফারেন্সে আরও নতুন দেশে আমাদের আম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আরিফুর রহমান বলেন, আম রপ্তানির জন্য উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা (জিএপি) সার্টিফায়েড আম বাগান না থাকার কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে সার্টিফায়েড আম বাগান তৈরীতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। দুয়েক বছরের ব্যবধানে এটি করা সম্ভব হবে। তখন আম রপ্তানির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত আম এখনো রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আসেনি। বানানা ম্যাংগো জাতের আম রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। সেটি সম্ভব হলে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানি আরো বেড়ে যাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ২ লাখ ৩৫ হাজার একর জমিতে আমবাগান আছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ৭৭ কেজি করে আম উৎপাদন হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমের উৎপাদন ছিল ২১ লাখ ৪৩ টন, ওই বছর রপ্তানি হয়েছিল ৩০৯ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ২৩ লাখ ৭২ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৩২ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ২৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ৩১০ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৬৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৮৩ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩২ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। চলতি অর্থবছর গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলবাজার নিয়ে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পর্যালোচনা প্রতিবেদন বলেছে, সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান আছে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে মেক্সিকো, ৪ লাখ ৬৮ হাজার টন। থাইল্যান্ড রপ্তানি করেছে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২০ সালে থাইল্যান্ড বিশ্বের সর্বোচ্চ ৭৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের আম রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ১৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ও পাকিস্তান ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের আম রপ্তানি করে। সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৫০ হাজার ডলারের (৪২ লাখ টাকা) আম রপ্তানি করে, যার বড় অংশের ক্রেতা মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ২৯,৪২৯ ডলারের ফ্রেশ এন্ড ড্রায়েড ম্যাংগো রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৩৬,০২৭ ইউএস ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০০১৯ ইউএস ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৯৬ ইউএস ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬৬৩ ইউএস ডলারের আম রপ্তানি হয়।

বর্তমানে বিশ্বের ২৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তবে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে সাতটি জাতের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা।

 

Scroll to Top