ক্রীড়া ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এফডিআরের ২৫০ কোটি টাকার বিপুল অর্থ অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নিয়েছে- এমন একটি গুঞ্জন বেশ কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে যখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, তখন বিষয়টি বিসিবির দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
বিসিবি প্রথমে কয়েকদিনে ছড়িয়ে পড়া তথ্যকে ভুল বলে উল্লেখ করে দাবি করছে, সভাপতি ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ইচ্ছাকৃতভাবে এই তথ্যগুলো ছড়ানো হচ্ছে। বিসিবির দাবি, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই অর্থ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিসিবির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেশের গণমাধ্যমের কিছু অংশে বোর্ডের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছে। বিসিবি মনে করে যে, এই প্রতিবেদনগুলো ভুল তথ্যযুক্ত এবং বোর্ড ও এর সভাপতি ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়েছে।
বরাবরের মতো নিজেদের স্বচ্ছতার কথা তুলে ধরে বিসিবি। সে সঙ্গে নিজেদের কার্যক্রমের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা লিখেছে, ‘বিসিবি সমস্ত আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রতি তাদের করা প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। ছড়িয়ে পড়া তথ্যের প্রেক্ষিতে, বোর্ড সাধারণ জনগণ এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মিডিয়া সদস্যদের সুবিধার্থে নিম্নলিখিত স্পষ্টীকরণ বিষয়গুলো উল্লেখ করতে চায়’-
‘২০২৪ সালের আগস্টে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর, ফারুক আহমেদ বোর্ডের আর্থিক স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিশেষ করে পূর্ববর্তী বছরগুলোতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরের মাসগুলোতে দেশ যে কঠিন অর্থনৈতিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তার প্রেক্ষাপটে এ অগ্রাধিকারকে নির্ধারণ করেন।’
‘এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, বিসিবি প্রথমে কোন কোন ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে, সেগুলো মূল্যায়ন করে। এক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গ্রিন ও ইয়েলো ক্যাটাগরির শ্রেণিবদ্ধ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে লেনদেন বজায় রাখার কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সাথে সংযুক্ত বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব বিবেচনা করে, বিসিবি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা তুলে নেয় এবং এর মধ্যে ২৩৮ কোটি টাকা গ্রিন ও ইয়েলো ক্যাটাগরির ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করে। বিসিবির পরিচালনা ব্যয় সহজতর করার জন্য অবশিষ্ট ১২ কোটি টাকা একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।’
‘উল্লেখ্য, ব্যাংকিং অংশীদার পরিবর্তন বা ব্যাংকের সাথে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিসিবি সভাপতি বোর্ডের অজান্তেই একতরফা সিদ্ধান্ত নেন না। ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে অনুমোদনকারী বোর্ডের দুজন স্বাক্ষরকারী আছেন। তারা হলেন, বিসিবি ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা এবং বিসিবি টেন্ডার ও ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম। বোর্ড সভাপতি এই বিষয়ে স্বাক্ষরকারী নন।’
‘বিসিবি আরও জানে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী উপাদান এবং ক্রিকেট প্রশাসনের বাইরে ও ভেতরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বোর্ডকে অপমানিত করার এবং বোর্ডের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। বিসিবির তহবিল এবং এর কার্যক্রমের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা জোরদার করার এটিও আরেকটি প্রাসঙ্গিক কারণ ছিল।’
‘২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, বিসিবি ১৩টি ব্যাংককে তাদের তহবিল এবং স্থায়ী আমানত জমা রাখার দায়িত্ব দিয়েছে। এ পদক্ষেপ কেবল বোর্ডের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি বরং বিসিবিকে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক মুনাফার হার প্রদানকারী অংশীদারত্বগুলো কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এই কৌশলের ফলে, বিসিবি পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় তার স্থায়ী আমানত থেকে মুনাফা আয়ের ক্ষেত্রে ২-৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘তাছাড়া, গত ছয় মাসেই বিসিবি বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা পৃষ্ঠপোষকতা সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া বিসিবির অংশীদার ব্যাংকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা স্পন্সর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এই আর্থিক সম্পর্কের শক্তি এবং গভীরতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।’
সর্বশেষ বিসিবি থেকে মিডিয়ার কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, বিসিবির সুনাম ক্ষুন্ণ করে, এমন ভুল তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘বিসিবি আর্থিক সুশাসনের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য নিবেদিত এবং বৈধ ও তথ্যভিত্তিক উৎস থেকে যাচাই-বাছাইকে স্বাগত জানায়। বোর্ড গণমাধ্যমগুলোকেও অনুরোধ করছে, যেন তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং এর কর্মকর্তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে পারে এমন অপ্রমাণিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে।’
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ