চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রয়েছে জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
১৪ দলীয় জোটের প্রধান ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে জোট নেতাদের বৈঠকের পরেরদিন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন কাদের।
তিনি বলেন, ১৪ দলে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। সিট শেয়ারিংয়ের বিষয় আজকালের মধ্যে নির্ধারিত হয়ে যাবে। দু-একদিনের মধ্যেই নির্বাচনী আসন নিয়ে শরিক দলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আওয়ামী লীগ।
‘তাদের চাওয়া এবং সেই চাওয়া পূরণের বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ জোটসঙ্গীরা দাবি করতেই পারেন, চাইতেই পারেন৷ তবে অ্যাডজাস্টমেন্টটা তো করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেয়ার পরে যদি তারা না জেতে, সেগুলো বিবেচনায় নেয়া হবে। নির্বাচনে জিততে হবে, এটাই মূল বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। মূলত ওই বছরের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়।
২০০৮ সাল থেকে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনেও জোটসঙ্গীদের ১৩ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
জোটের অন্যান্য দলের সিংহভাগ প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারের ভোটেও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।
এদিন তফসিল ঘোষণার পর মাত্র দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দুই আসন হলো জাসদের হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫।
এবার ১৪ দলের শরীকদের জন্য আওয়ামী লীগ কতটি আসনে ছাড় দেবে তা নিয়েই চলছে গুঞ্জন। এরি মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয় সোমবার।
ওইদিন সন্ধ্যায় ১৪ দলের নেতাদের নিয়ে গণভবনে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকের বিষয়ে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
অবশ্য জোটপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার রাতেই তরিকত ফেডারেশনে নেতা নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জানান, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জোটের চার শরিকদলের প্রধানের আসন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক আলোচনাই বেশি হয়েছে। সামনে নির্বাচনে করণীয় কী, এসব বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
‘দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল লড়াই করে যাবে।’
আসন ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি বলেন, আসন ভাগাভাগিতে সুবিধাটা দেখতে হবে। তাদের সাথে একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। একটা দল ৪০টা চাইলে, দিয়ে দিলে তারা না জিতলে কেমন হবে!
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২০০৪ সালে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। এই জোটে রয়েছে- জাসদ (ইনু), সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ, তরিকত ফেডারেশন, জেপি।
শুরুতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দল মিলে জোট গঠিত হয়।
কিন্তু জোট গঠনের পর পরই ১১ দল ভেঙে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। রয়ে যায় ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণফোরামসহ কয়েকটি দল। তারপরও জোটটি ১৪ দল নামেই পরিচিত।
এদিকে বাংলাদেশে নিয়ে বাইরের শক্তির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের দেশের যে খেলা, তা নিয়ে কথা হয়েছে।
এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে দল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।