হাটহাজারী প্রতিনিধি: এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর অবশেষে পুরোদমে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ। রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাতের নীরবতা ছাপিয়ে নদীতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে ডিম ধরার জন্য নদীপাড়ে অপেক্ষায় থাকা তিন শতাধিক ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে জানা গেছে, রোববার সকাল সাতটার দিকে নদীতে দ্বিতীয় দফায় দফায় ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে জাল পেতে পুরোদমে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় থাকেন। সারাদিন নদীতে অবস্থান নিয়ে ডিম না ছাড়ায় অনেককেই হতাশ হতেও দেখা যায়। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পুরোদমে নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার পর তিন শতাধিক নৌকা হালদা নদীর আজিমের ঘাট, নতুনহাট, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা, রামদাস মুন্সীর হাট, নাপিতেরঘাট, সোনাইরমুখ, গড়দুয়ারা, অংকুরিঘোনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছে। সোমবার ভোররাত পর্যন্ত চলে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ।
হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী হোসাই বলেন, ডিম কতটুকু পেয়েছি বড় কথা নয়, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির।
প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী মোহাম্মদ শফি বলেন, পরিমাণে খুব বেশী না হলেও ডিম যা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট।
হাটহাজারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: ফারুক মায়েদুজ্জামান জানান, অনুকূল পরিবেশ থাকায় রোববার রাতে হালদা নদীতে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সংগ্রহকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছে।
উল্লেখ্য প্রতিবছর এপ্রিল-মে দুই মাসের যে কোনো সময় ডিম ছাড়ার ভর মৌসুমে নিষিক্ত ডিম আহরণ করতে ব্যস্ততার সীমা থাকেনা হালদাপারের ডিম সংগ্রহকারীদের।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে গতকাল (১৮ জুন) মধ্যরাতে জোয়ারের সময় আমতুয়া পয়েন্টে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে এরপর এই ডিম জোয়ার বাড়ার সাথে সাথে নাপিতের ঘাট, আজিমারঘাট, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী সংলগ্ন পুরালি স্লুইজ গেইট, নোয়াহাট সহ হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে এই ডিম ছড়িয়ে পড়ে। শনিবারের বজ্রপাতসহ ব্যাপক বৃষ্টির প্রভাবে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়া গতকাল অর্থাৎ রবিবার সকালে অমাবস্যা শেষ হওয়ায় রাতের জোয়ারে ডিম ছাড়ার শতভাগ সম্ভাবনা ছিল। তাই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, বালতিসহ ডিম ধরার প্রয়োজনীয় সরন্জাম নিয়ে পূরোপূরি প্রস্তুত ছিল। এই বছর সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় হালদা নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ডিমসংগ্রহকারী সহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শাহিদুল আলম বলেন আমরা সব সময় হালদা নদীতে আছি।ডিম সংগ্রহকারীদের খোঁজখবর নিচ্ছি।এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারি হ্যাচারীগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।প্রতিটা হ্যাচারিতে আমরা আনসার দিয়ে রেখেছি।আমরা উপজেলা প্রশাসন সব সময় ডিম সংগ্রহকারীদের পাশে ছিলাম,আছি এবং থাকবো।