নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আজ প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩ প্রার্থী।
তাঁরা হলেন- হাটহাজারীর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান।
এস এম রাশেদুল আলম এবার তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ২০১৯ সালে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হলেও এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের মুখোমুখি। নির্বাচনের মাঠে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী (আনারস প্রতীক) ও হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান (ঘোড়া প্রতীক) প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পদে থাকা এস এম রাশেদুল আলম স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে বেশ এগিয়ে থাকলেও নগদ টাকা ও সম্পদে কোন অংশে কম নন কোটিপতি ইউনুস গনি চৌধুরী। তবে মাত্র ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান।
হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এস এম রাশেদুল আলম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হলফনামায় স্নাতক পাস উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা থেকে তার আয় ৩ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন ও পরামর্শক ইত্যাদি) উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তার আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন ব্যবসায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ১ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তার জমা রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৮৪ টাকা। বর্তমানে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৮৭৫ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তার।
স্বর্ণ রয়েছে ৪৫ ভরি যার দাম উল্লেখ করেছেন মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার বাড়িতে ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা মূল্যের। ১৫০০ বর্গফুট জায়গায় একটি বাড়ি রয়েছে তার। যার দাম ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম নগরের এমআর নিজাম রোডের ব্যাংক এশিয়া থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৬১৫ টাকা।
এদিকে, ইউনুস গনি চৌধুরী হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আনারস প্রতীকে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হফলনামায় মাস্টার্স পাস (এমএ) উল্লেখ করেন। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ টাকা। ৮ লাখ টাকা দামের গাড়ি রয়েছে তার। নিজের নামে স্বর্ণ রয়েছে ৬০ হাজার টাকার। স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকার। ২৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। ব্যবসায় ইউনুসের মূলধন রয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪৩ টাকার। কোম্পানির পরিচালক হিসেবে শেয়ার আছে ২৫ লাখ টাকার। স্ত্রীর নামে আছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৫ টাকার মূলধন।
বর্তমানে নিজের নামে অকৃষি জমি রয়েছে ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৮০৭ টাকা মূল্যের। স্ত্রীর নামে আছে ৬৪ লাখ ৯ হাজার ৩০০ টাকার অকৃষি জমি। নিজের নামে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট আছে ২১৫২ দশমিক ৩৪ বর্গফুটের। যার মূল্য ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৪০ টাকা। তার কোনো ঋণ নেই।
এছাড়া অপর প্রার্থী সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে লড়ছেন ঘোড়া প্রতীকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হফলনামায় ডিগ্রি পাস (বিকম) উল্লেখ করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি মেসার্স ম্যাক্সিম কার্গো সিস্টেম লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। তার নগদ রয়েছে ৮০ হাজার টাকা।
কিন্তু স্ত্রীর নগদ রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার রয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। বন্ড ও ঋণপত্র রয়েছে দেড় লাখ টাকার। তার একটি প্রাইভেট কার রয়েছে, যার মূল্য ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার নামে ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, যার দাম ১ লাখ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫ ভরি স্বর্ণ, যার দাম ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার আসবাবপত্র।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার আওতাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৩ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৮০৫ জন।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসএ