নিজস্ব প্রতিবেদক : দি চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে বিভিন্ন পদে অংশগ্রহণকারী বিএনপিপন্থী প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। যদিও ভোট কেন্দ্রে দিনভর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।কিন্তু দিন শেষে কোনো প্যানেল থেকে বিএনপিপন্থী একজন প্রার্থীও নির্বাচিত না হওয়ায় এ নিয়ে রহস্যের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরাজয় সোসাইটিসহ নগর জুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে পরাজিত বিএনপিপন্থীরা এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে অভিহিত করছেন। তাঁরা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন তুলেছেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি দি চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেওয়া তিনটি প্যানেলে মধ্যে ওয়াহিদ-দিলরুবা-রাব্বী পরিষদ জয়ী হয়।
জানা গেছে, দি চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে ওয়াহিদ-দিলরুবা-রাব্বী পরিষদে কোন বিএনপিপন্থী প্রার্থী ছিলেন না। বাকি দুই প্যানেলের মধ্যে মোরশেদ-কাদের-সাইফুদ্দিন প্যানেলে সহসভাপতি পদের প্রার্থী ডা. গোলাম কাদের চৌধুুরী পাঁচলাইশ থানা বিএনপির নেতা ছিলেন। কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম নগর বিএনপির শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, সদস্য প্রার্থী মামুনুল ইসলাম (হুমায়ুন) নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেম্বার। কাজী বেলাল-আলতাফ প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী কাজী বেলাল উদ্দিন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
কে কত ভোটে হেরেছেন
নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি পন্থী কাজী বেলাল পেয়েছেন ২৫৯ ভোট, ফজলে রাব্বি খান ৪১৪ ভোট, আর নির্বাচিত মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পেয়েছেন পেয়েছেন ৪৯১ ভোট। সহসভাপতি পদের দুই প্রার্থীর মধ্যে সৈয়দা দিলরুবা আহমেদ ৫৮৫ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্রার্থী গোলাম কাদের চৌধুরীকে (৫৬৭ ভোট) ৩৬ ভোটে হারিয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদের তিন প্রার্থীর মধ্যে মোহাম্মদ তৈয়ব সিকদার ৫৫৪ ভোট,বিএনপিপন্থী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ৪৭৩ ভোট এবং আলতাফ হোসেন ১৩১ ভোট পেয়েছেন। সদস্য পদের পরাজিত বিএনপিপন্থী প্রার্থী মামুনুল ইসলাম পেয়েছেন ৩৮৮ ভোট, অপর সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ১৩১ ভোট।
নির্বাচনে কমিটির ৮টি সদস্য পদে প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, মোহাম্মদ আজাদ মঈনুদ্দীন, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন খান চৌধুরী, এসএম জমির উদ্দিন এবং মোহাম্মদ ইফতেখারুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে ওয়াহিদ মালেক ৬৩৬ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মোরশেদ আহমেদ মঞ্জুকে (৫২২ ভোট) হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোষাধ্যক্ষ পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী পরিচালনা কমিটি ও নির্বাচন কমিশনারের কাছে প্রার্থীতার বৈধতা বাতিলে দুইটি অভিযোগ করেছিলাম। একটি হলো- সভাপতি প্রার্থী ওয়াাহিদ মালেক রোজ ভিউ প্রকল্পে দশম কিস্তি পরিশোধ করেননি। আরেকটি হলো- একজন প্রার্থী বিদেশে ছিলেন। প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও কিভাবে স্বাক্ষর করেছেন? আমরা অভিযোগে ওই প্রার্থীর বিমানযাত্রা সম্পর্কিত তথ্যও সংযোজন করেছিলাম। কিন্তু অন্তর্বর্তী পরিচালনা কমিটি বা নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া নির্বাচনে আমাদেরকে পরাজিত করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভোটারদেরকে চাপ প্রয়োগসহ নানামুখী কৌশল অবলম্বন করেছেন। এমনকি ভোটগ্রহণ কার্যক্রমেও অপকৌশল অবলম্বন করেছেন। এ নিয়ে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সম্পাদক প্রার্থী কাজী বেলাল বলেন, নির্বাচনে নানাভাবে অপচেষ্টা হয়েছে আমাদেরকে হারানোর। ভোটারদেরকে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে রহস্য অবশ্যই রয়েছে। তবে এর বেশি কিছু আমি মন্তব্য করতে রাজি নই।
তবে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সোসাইটির অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের উপ নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) কানিজ ফাতেমা জানিয়েছেন, রোজ ভিউ প্রকল্পের প্লটের দশম কিস্তি পরিশোধ শুধু নির্বাচিত সভাপতি ওয়াহিদ মালেক করেননি-এমনটা নয়। এ প্রকল্পের দশম কিস্তি জমা দিতে সোসাইটির প্রায় ৩০-৪০ সদস্য এসেছিলেন। তবে যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই সবার সর্বসম্মতিক্রমে কারো কাছ থেকে কিস্তি আদায় করা হয়নি। সেক্ষেত্রে ওয়াহিদ মালেক কিস্তি পরিশোধ না করলেও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে পার পেয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে তো মনোনয়ন বাতিলের সুযোগ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আরেক প্রার্থী যিনি দেশে অনুপস্থিত অথচ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকেই প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি- পত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি জমা দিয়েছেন কিনা? সবকছিু ঠিকঠাক পাওয়া সাপেক্ষে আমরা প্রার্থীদের মনোনয়নের সত্যায়ন দিয়েছি। অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগ খসড়া তালিকা প্রকাশের পর জেলা সমবায়ের নিবন্ধকের কাছে দাখিল করেছেন। এখানে কোন প্রার্থী দেশে উপস্থিত না থেকেও যদি মনোনয়নপত্র জমা দেন সেক্ষেত্রে তো আমাদের জানার কথা নয়।
দি চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ–সহকারী নিবন্ধক গাজী মুহাম্মদ ওমর ফারুক। কমিশনের অপর দুই সদস্য ছিলেন ডবলমুরিং থানা সমবায় অফিসার বিজয় কৃষ্ণ নাথ এবং পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসার মমতাজ বেগম।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ