হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন, ৩৬ বছর ধরে অপেক্ষায় চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩৬ বছর ধরে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রামবাসী। ১৯৮৯ সালে দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে উচ্চ আদালতের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও নানা কারণে বেঞ্চগুলো ঢাকাতেই রয়ে যায়। তবে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সময়ে বিচার বিভাগের সংস্কার বাস্তবায়িত হওয়ার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। এ দাবি বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের আইনজীবী সমাজসহ নানা শ্রেণি পেশাজীবী এখন ঐক্যবদ্ধ। স্মারকলিপি প্রদানসহ এ দাবি বাস্তবায়নে নানামুখী কর্মসূচি পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, আইনের কাছে সকল জনগণের সমান আশ্রয় এবং সুযোগের সমতা নিশ্চিত করে ন্যায় বিচার জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালের ১১ মে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ৬টি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের ১৭ জুন সামরিক ফরমানের ধারা সংশোধন করে ঢাকা ছাড়া অপর ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চে রূপান্তরিত করা হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে সংবিধান পুনরুজ্জীবিত হলে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্তটি আবার বৈধতা পায়। এ প্রেক্ষিতে বিভাগগুলোতে স্থাপিত সার্কিট বেঞ্চে বিচার কাজও শুরু হয়।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এ এস এম বদরুল আনোয়ার বলেন, সার্কিট বেঞ্চগুলোতে জনগণ ন্যায় বিচার পেতে শুরু করলে ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের স্থলে ৮ম সংশোধনীর ২.ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ছয়টি সার্কিট বেঞ্চকে স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা প্রদান করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ৮ম সংশোধনী বাতিল ক্রমে মূল সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে। কিন্তু সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ কতিপয় আইনজীবীর নিজেদের স্বার্থে সেগুলো ঢাকায় স্থাপন করে সেখানেই বিচার কাজ শুরু করে। সেই থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের অপর বিভাগের জনগণকে ঢাকায় গিয়ে মামলা চালাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১৯ (১),২৭, ৩১, ৪৪ ও ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের বেঞ্চ চট্টগ্রামে স্থাপনের দাবি আমাদের আইনগত অধিকার। এ দাবি বাস্তবায়নে আজ সোমবার ১২ মে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. কাশেম কামাল জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করে সফলতা অর্জিত হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের হীন মানসিকতার কারণে দীর্ঘসময় ধরে যুক্তিসঙ্গত এ প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। গত ৩১ জানুয়ারি “বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনর ৪.১ ধারায় এ নিয়ে স্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে বলা আছে, ‘সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে প্রতিষ্ঠিত বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা।

তিনি বলেন, তবে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বা অবিভাজ্যতা এমনভাবে বজায় রাখবে যেন স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোন ভৌগলিক সীমারেখা দ্বারা বিভাজিত না হয় এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুন্ন না হয়।” তাই জনগণের দ্বারপ্রান্তে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে হলে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন সময়ের দাবি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

 

Scroll to Top