‘হয়তো ভুল অনেক করেছি’, ক্ষমা চাইলেন সোহেল রানা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নতুন দেশের চলচ্চিত্রশিল্প দাঁড় করাতে যারা কাজ করেছিলেন, তাদের অনেকে প্রয়াত হয়েছেন। অনেকে বরণ করেছেন বার্ধক্য। তাদের অন্যতম অভিনেতা সোহেল রানা। সহকর্মী ও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

ঢালিউডের প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রোববার বিএফডিসিতে আয়োজন করা হয়েছে দোয়া মাহফিল। প্রয়াতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সেখানে হাজির হয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন পুরাতন শিল্পীদের অনেকে। সেখানেই সহকর্মী, দেশবাসী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলেন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা।

বিএফডিসির আয়োজনে সোহেল রানা বলেন, ‘কে কখন চলে যাব, শিওর না। এই সুযোগে আমার সাথে যারা কাজ করেছে, আর যারা ভবিষ্যতে কাজ করবে, যারা চলচ্চিত্র জগতে আসবে, তাদের সঙ্গে আমি যদি কোনো ভুল-ত্রুটি কিংবা অন্যায় করে থাকি, আজ এই মুহূর্তে আমি এই সুযোগটা নেব, আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি কখন মরে যাব, জানি না। তারা যেন আমার ভুল-ত্রুটি অন্যায়গুলোকে ক্ষমা করে দেয়। এবং আমার জন্য দোয়া করেন, যাতে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছি, ভুল যে কিছু হয়নি তা নয়, হয়তো ভুল অনেক করেছি। আমি ভুলের জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে সৃষ্টিকর্তার কাছে যাব, সেই সময়ে যেন আমি নীতি বা আদর্শ নিয়ে সঠিক মুসলমান হিসেবে আল্লাহর কাছে যেতে পারি, সে জন্য সকলের কাছে আমি দোয়া চাচ্ছি।’

সোহেল রানা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক তিনি। ছবিটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নির্মাতা-প্রযোজক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। যদিও ফেসবুক একবার সোহেল রানা লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় আর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে অনুতপ্ত তিনি।

১৯৭২ সালে পারভেজ ফিল্মস নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়েন সোহেল রানা। প্রায় ৩০টির বেশি চলচ্চিত্র তিনি প্রযোজনা করেন। নায়ক খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে তার প্রযোজক পরিচয়। সোহেল রানা নাম ধারণ করে লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। একই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।

‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’ সোহেল রানার শুরুর দিকের সিনেমা। প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘লালু ভুলু’, ‘অজান্তে’, ‘সাহসী মানুষ চাই’ এই তিন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top