চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হাতুড়ির আঘাতে হত্যা করা সেই পাষণ্ড স্বামী লাশ ছুঁয়ে বলে— ‘আমাকে মাফ করে দে, আমি ভুল করেছি, তুই আমার ওপর কোনো দায়-দাবি রাখিস না।’
টাকার জন্য স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করা সে স্বামীর নাম মো. বেল্লাল হোসেন (৪৫)। নেশার টাকা না দেয়ায় ঝগড়ার মধ্যে স্ত্রীকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় স্ত্রী আছমা বেগমের (৪১) ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার মাইজপাড়া এলাকায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে হত্যা করে তার পাশে বসে ছিল স্বামী বেল্লাল।
পরে প্রতিবেশি ও স্বজনরা মিলে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বেল্লালের বাড়ি ভোলা জেলায়। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে মো. হান্নানকে (১৭) নিয়ে নগরীর মাইজপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন বলে জানা গেছে।
নিহত আছমার মামা মো. আনোয়ার জানান, আছমা পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। বেল্লাল সেফটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজ করে। সে নিয়মিত ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে। নেশার টাকার জন্য নিয়মিত আছমার সঙ্গে ঝগড়া, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করতো।
আছমার ছেলে হান্নান বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার মা বেতন পেয়েছে। আমার বাবা বেতনের টাকাগুলো তার হাতে দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু মা দিতে না চাইলে তার সঙ্গে শুক্রবার রাতে ঝগড়া করতে। তাকে মারধরও করতে থাকে। আমি পাশের রুম থেকে মায়ের চিৎকার শুনে দৌঁড়ে গিয়ে দেখি বাবা হাতুড়ি দিয়ে মাকে মারছে। আঘাতের পর মা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। এ অবস্থায় আমি বাবাকে ধরে ফেলি, কিন্তু আমাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমিও মেঝেতে পড়ে যাই। পরে দরজা খুলতে গেলে বাবা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তবুও জোর করে আমি দরজা খুলি।
আছমার মামা আনোয়ার আরও বলেন, হান্নান দরজা খুলে দিলে আমি ভেতরে ঢুকে দেখি জামাই আছমাকে ধরে বসে আছে। বলছে, আমাকে মাফ করে দে, আমি ভুল করেছি, তুই আমার ওপর কোনো দায়-দাবি রাখিস না। আমি একদিকে আছমাকে কাঁধে তুলে নিই, আবার জামাইকেও শক্ত করে ধরে রাখি। এলাকার লোকজন টেক্সি নিয়ে আসে। দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রথমে বিজিএমইএ হাসপাতাল পরে সেখান থেকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে ডাক্তার জানায়, আছমা বাসাতেই মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে, সেটা আমি জানানোর পর হাসপাতালের লোকজন এবং সেখানে থাকা আমাদের এলাকার লোকজন মিলে বেল্লালকে আটক করে রাখে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ বলেন, মূলত নেশার টাকার জন্য ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি ৩-৪ বার আঘাত করে খুন করেছে স্বামী বেল্লাল। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। খুনী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ