বাঁশখালী প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের আলোচিত নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিককে গ্রেফতারের পর থানায় এসে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন একাধিক ভুক্তভোগী। কেউ কেউ ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোনা মানিকের প্রতারণার স্বীকার হয়েছে নারী ও গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্তত শতাধিক মানুষ। ২০১৭ সাল থেকে জনগণের মাঝে বিভিন্নভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে লোভ দেখিয়ে সোনা মানিক নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে এই অপকর্ম করে আসছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তবে বর্তমান বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের নির্দেশনায় থানার চৌকস দারোগা হাবিবের নেতৃত্বে পুলিশ বোরকা পড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এসময় গ্রেফতার এড়াতে পালাতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন মানিক। আবার সে দুই পুলিশ সদস্যকে আহত করে। তাকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তা দেখে প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকে বাঁশখালী থানায় মামলা করছে। শুধু তাই নয়, তাকে গ্রেফতারের পর তার নিজ গ্রামে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে পুরো এলাকা আতঙ্কমুক্ত হয়েছে।
বাঁশখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওয়ারেন্টের আসামি সোনা মানিককে ধরতে যায় পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে সোনা মানিক। পুলিশ সোনা মানিকের ঘর ঘিরে ফেলে। সোনা মানিক তার বিলাসবহুল বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে তার ঘর তল্লাশি করে একটি বিদেশি রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি, ২টি গুলির খোসা, ২টি দেশিয় তৈরি এলজি, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, একটি সুইচ গিয়ার, একটি কিরিচসহ দক্ষিন বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকার ত্রাস ও শীর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী আহমদ কবির প্রকাশ নকল সোনা মানিককে গ্রেফতার করা হয়। এসময় থানার এসআই হাবিবসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ও ঘটেছে।
বাঁশখালী থানা সূত্রে আরও জানা যায়, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে দুইটি মামলাসহ মোট ১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে বাঁশখালী থানার দুই পুলিশ সদস্য এবং নকল সোনা ব্যবসায়ী মানিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোনা মানিকের প্রতারণা
র্দীঘদিন যাবৎ স্বপ্নে স্বর্ণের পাতিল পাওয়ার কথা বলে খাঁটি সোনা দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করার পর অস্ত্র হাতে দিয়ে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করত মানিক। এভাবে তার প্রতারণার স্বীকার হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছে।
তাদের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রামু থানাধীন ঈদগর ঝুমপাড়া ৭নং ওয়ার্ডের প্রবাসী বেলালের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা হাতিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ থানাধীন বাংলাবাজার ডেবারপার আব্দুল মালেকের পুত্র ফিরোজ উদ্দিন থেকে নিয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
তার প্রতারণার ফাঁদ থেকে রেহাই পায়নি ফিরোজ উদ্দিন নামে এক সাংবাদিকও। তার প্রতারণার সঠিক বিচার চেয়ে প্রতিনিয়ত থানায় আসছেন অনেক ভুক্তভোগী। এছাড়া সন্ত্রাসী মানিক ও তার পরিবারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীরা জানায়, স্বর্ণের প্রলোভনে শত শত পরিবারের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। সন্ত্রাসী কায়দায় গৃহবন্দী করে মারধর, জোরপূর্বক অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল, ধর্ষণসহ নানা অপকর্ম করতেন সোনা মানিক। তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলছেন, নকল সোনা ব্যবসায়ী মানিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। তবে তার কাছ থেকে প্রতারণার শিকার লোকজন মামলা করলে মামলা আরও সংখ্যা বাড়তে পারে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ